সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতকে না হারানোর হতাশা এখনো তাড়ায় সোহানকে

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ভারতকে না হারানোর হতাশা এখনো তাড়ায় সোহানকে
ভারতকে না হারানোর হতাশা এখনো তাড়ায় সোহানকে

বিশ্ব ক্রিকেটে এই ধরনের কীর্তি এখন আর বিরল নয়। আইপিএলে রাহুল তেওয়াটিয়া শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কায় ম্যাচ জিতিয়ে দেন। কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের টানা চার ছক্কায় ইয়ান বিশপ বলে ওঠেন, 'রিমেম্বার দা নেম।' দুনিয়াজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের উৎসবে শেষ ওভারে বিশের বেশি রান তাড়ায় জয়ের নজির মাঝেমধ্যে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য এসব স্বপ্নের মতো। রূপকথাসম। নুরুল হাসান সোহান দেখালেন, এমন স্বপ্ন সত্যি হয়। রূপকথারাও বাস্তব রূপ পায়।

বিপিএলেই শেষ ওভারে আরিফুল হকের চার ছক্কায় ম্যাচ জয়ের ঘটনা আছে। তবে রাতের শিশিরভেজা বলে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে বোলিং দেওয়া নিয়েও সেদিন প্রশ্ন ছিল অনেক। সোহান জাদুকরি একটি ওভার উপহার দিলেন আরও বড় রান তাড়ায়, বিদেশি এক বোলারের সামনে।

সেই বোলার, কাইল মেয়ার্স অবশ্য বিশেষজ্ঞ পেসার নন। খুব গতিময় নন। তার বিশেষত্ব নতুন বলে সুইং-সিম আর লাইন-লেংথ। পুরোনো বলে কখনোই কার্যকর নন তিনি। এই ম্যাচে শেষ ওভারে তাকে বোলিংয়ে আনতে হয় বাধ্য হয়েই। মূল পেসারদের কোটা ততক্ষণে শেষ। মেয়ার্স শেষ ওভারে শর্ট বল, আলগা বল করেন প্রতিটি। কিন্তু বোলার যেমনই হোক, ডেলিভারি যেখানেই থাকুক, ওভারে তিন ছক্কা তিন চার, শেষ ওভারে ৩০ রান করে ম্যাচ জয়, যে কোনো প্রেক্ষাপটেই এটি অসাধারণ কিছু।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনন্য সাধারণ। আর নেই এমন কিছু। বিপিএলে শেষ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ডও এটিই। সিলেটে বৃহস্পতিবার ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহর ৪৮ রানের দুটি ইনিংস ও ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি রংপুর লড়াইয়ে রাখে। তার পরও ম্যাচ ছিল ফরচুন বরিশালের মুঠোয়। শেষ ওভার স্বাভাবিকভাবে এগোলে পরিষ্কার ব্যবধানেই ম্যাচ জেতার কথা বরিশালের।

এই সোহান অবশ্য আগে পারেননি একবার। সেটি আরও বড় মঞ্চে। আক্ষেপটাও তাই তীব্র। বরিশালের বিপক্ষে জয়ের পর খ্যাপাটে উদযাপন করলেন সোহান। ডাগআউটের সামনে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে উলস্নাস করলেন কোচ মিকি আর্থার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন রংপুরের সবাই। কিন্তু সোহানের মনে তখন উঁকি দিচ্ছে আড়াই বছর আগের সেই স্মৃতি। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচের কথা সংবাদ সম্মেলনে মনে পড়লো সোহানের,' এই ম্যাচটা জেতার পরে মনে হচ্ছিল, সবশেষ টি২০ আমি যেটা খেলেছিলাম, ভারতের সাথে বিশ্বকাপের ম্যাচ ছিল, এক ওভারে হয়তো ২০ রান দরকার ছিল, আমি মনে হয় ১৫ বা ১৬ রান করেছিলাম। শেষ বলে ছয় হলে হয়তো ম্যাচটা জিততাম। ছয় হয় নাই, ম্যাচটা ৫ রানে হেরেছিলাম।'

'এটা আমার কাছে সবসময় মনে থাকে যে, বিশ্বকাপের মতো এরকম সময়ে ম্যাচটাৃযদিও ২০ রান লাগত, ২০ রান অনেক রান, কিন্তু তারপরও অনেক কাছাকাছি গিয়েছিলাম। যদি শেষ করতে পারতাম, ভালো লাগত। তবে যেটা বললাম যে, সম্মান দেওয়ার মালিক আলস্নাহ। অবশ্যই আলস্নাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি দলের জন্য ভালো ব্যাট করতে পেরেছি।'- যোগ করেন তিনি।

সেই ম্যাচটির কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাক আরেকটু। ২০১৬ টি২০ট বিশ্বকাপে শেষ তিন বলে বিবশ হয়ে যাওয়ার মতো অতটা দুঃসহ ম্যাচ সেটি নয়। তবে হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছিল সেদিনও। ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেইডে সেদিন ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ১৬ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৫১ রান।

লিটন কুমার দাসের ২৭ রানে ৬০ রানের ইনিংস পথেই রেখেছির বাংলাদেশকে। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় পরে দূরে সরে যায় সম্ভাবনা। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২০ রানের। আর্শদিপ সিংয়ের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন তাসকিন আহমেদ। পরের বলে ছক্কা মারেন সোহান। তবে পরের বলে তিনি রান নিতে পারেননি, চতুর্থ বলে নেন দুটি রান। পরের বলে মারেন বাউন্ডারি।

শেষ বলে ছক্কা মারতে পারলে ম্যাচ হতো 'টাই।' খেলা গড়াত সুপার ওভারে। কিন্তু সোহান কেবল এক রান নিতে পারেন। ১৪ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত থেকে হতাশায় মাঠ ছাড়েন তিনি। বিপিএলের ম্যাচে তো আর বিশ্বকাপের আক্ষেপ দূর হয় না। তবে সোহানের কথায় ফুটে উঠল, পরেরবার বড় মঞ্চে এরকম সুযোগ এলে, বিপিএল থেকেই প্রেরণা পাবেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে