একের পর এক সাফল্যে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক নারী ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি। যদিও ক্রিকেটার হিসেবে নয়, আম্পায়ার হিসেবে। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করেছেন। এবার আরও বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। মালয়শিয়ায় আগামী ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে আম্পায়ারিং করার সুযোগ পেয়েছেন জেসি। আইসিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২৫ নারী অনূর্ধ্ব-১৯ টি২০ বিশ্বকাপের ২০ ম্যাচ কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করেছে। যাদের মধ্যে আম্পায়ার ১৬ জন এবং চারজন আছেন ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে। সর্বোচ্চ দুজন করে আম্পায়ার থাকছেন নেদারল্যান্ডস, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে, ওমান, আয়ারল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে আছেন একজন করে আম্পায়ার।
মেজর ইভেন্টে জেসি এর আগেও আম্পায়ারিং করেছেন। ২০২৪ সালে টি২০ সংস্করণে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত নারী এশিয়া কাপে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা আছে তার। ডাম্বুলায় গত বছর শ্রীলংকা-ভারত ফাইনালে জেসি মাঠের আম্পায়ার ছিলেন।
আগামী শনিবার মালয়েশিয়ায় শুরু হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে খেলা পরিচালনার জন্য সোমবার ২০ সদস্যের ম্যাচ অফিশিয়ালের নাম ঘোষণা করেছে আইসিসি। সেই তালিকায় আছেন বাংলাদেশি আম্পায়ার জেসি। ৩৪ বছর বয়সি জেসি এখন পর্যন্ত মেয়েদের ২৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। গত বছর জুলাইয়ে নারী এশিয়া কাপ টি২০তেও আম্পায়ারিং করেছেন। ডিসেম্বরে মালয়েশিয়াতেই হয়ে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপ টি২০তে তাকে আম্পায়ারের ভূমিকায় দেখা গেছে।
তবে জেসির স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করার। গত অক্টোবরে নারী টি২০ বিশ্বকাপের আয়োজনস্বত্বও পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টে সাথিরার আম্পায়ারিং করার ব্যাপারে বিসিবিও আশাবাদী ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তা সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সাথিরাকেও সেই টুর্নামেন্টে ম্যাচ অফিশিয়ালদের তালিকায় রাখা হয়নি। তিন মাস পর আরেকটি বিশ্বকাপ দিয়ে তাঁর আশা পূরণ হতে চলেছে। হোক না সেটা বয়সভিত্তিক দলের বিশ্বকাপ।
প্রথমবারের মতো নারী অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপ হয়েছে ২০২৩ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে ভারত। আগামী ১৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপ। ১৬ দলের এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে ২ ফেব্রম্নয়ারি। বিশ্বকাপে এবার 'ডি' গ্রম্নপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নেপাল ও স্কটল্যান্ড।
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপে ২০ জন ম্যাচ অফিশিয়ালের ১৬ জন আম্পায়ার। সেখানে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকছেন সাথিরা। ম্যাচ অফিশিয়ালের দায়িত্বে থাকছেন আরও ১৩ দেশের ১৯ জন। ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করবেন ৪ দেশের ৪ জন। ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নেদারল্যান্ডস থেকে আম্পায়ার থাকছেন ২ জন করে।
তালিকায় আছেন কাতারের শিবানী মিশ্রও, যিনি ২০১৯ সালে প্রথম নারী অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। ম্যাচ অফিশিয়ালদের শুভকামনা জানিয়ে আইসিসির আম্পায়ার্স ও রেফারিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শন ইয়াসে বলেছেন, 'এই ইভেন্টে নির্বাচিত আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিদের অভিনন্দন। তাঁরা দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করে এটা অর্জন করেছেন। এটি একটি বৈচিত্র্যময় দল, যা সত্যিই চমৎকার। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তারা ভালো পারফর্ম করবেন এবং কেউ কেউ খেলাটির আরও উঁচু স্তরে দায়িত্ব পালন করার দিকে অগ্রসর হবেন।'
২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেবার ম্যাচ অফিশিয়ালের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের দুজন-আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত ও ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল। সৈকত এখন আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার। রাহুল চলমান বিপিএলে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২৫ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপে আম্পায়ার যারা: সাথিরা জাকির জেসি (বাংলাদেশ), অ্যাশলি গিবনস (অস্ট্রেলিয়া), গায়ত্রী ভেনুগোপালান (ভারত), নারায়ণ জননী (ভারত), আয়দান সিভার (আয়ারল্যান্ড), নিতিন ব্যাথি ( নদারল্যান্ডস), রিজওয়ান আকরাম (নেদারল্যান্ডস), রাহুল আশার (ওমান), সালিমা ইমতিয়াজ (পাকিস্তান), শিবানি মিশ্র (কাতার), কেরিন ক্লাস্তে (দক্ষিণ আফ্রিকা), দেদুনু সিলভা (শ্রীলংকা), বিজয়া প্রকাশ মালেলা (যুক্তরাষ্ট্র), ক্যানডেস লা বোর্দে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), মারিয়া অ্যাবট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ফরস্টার মুতিজোয়া (জিম্বাবুয়ে)।
ম্যাচ রেফারি : ডেভিড গিলবার্ট (অস্ট্রেলিয়া), ডিন কস্কার (ইংল্যান্ড), ট্রম্নডি অ্যান্ডারসন (নিউজিল্যান্ড), রিওন কিং (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।