দিনভর নাটকীয়তা আর লজ্জাজনক এক অধ্যায় পার করে অবশেষে অনুশীলনে ফিরেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল দুর্বার রাজশাহী। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। তার আগেই নিজেদের সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। বিপিএলে প্রায় অর্ধেক পার করে ফেললেও এখন পর্যন্ত পারিশ্রমিকের ১ টাকাও বুঝে পাননি দুর্বার রাজশাহীর স্থানীয় ক্রিকেটাররা।
আর এই নিয়ে দলের সদস্যদের ভেতর ছিল ক্ষোভ। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার অনুশীলন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অনুশীলন করেননি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। পরে দিনভর চলেছে নানা নাটকীয়তা। সন্ধ্যায় হয়েছে বৈঠক। এরপর রাজশাহী কর্তৃপক্ষের থেকে মিলেছে নিশ্চয়তা। তাদেও দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি মেনে বৃহস্পতিবার সকালেই দেখা গেল দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের অনুশীলন। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলন শুরু করেন ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়ও ছিলেন অনুশীলনে।
এর আগে বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির এক খেলোয়াড় নিশ্চিত করেন, পারিশ্রমিক না পাওয়ার কারণে অনুশীলন স্থগিত রেখেছেন দলের ক্রিকেটাররা। খেলোয়াড়দের পক্ষে থেকে বলা হয়েছিল তারা অনুশীলন বর্জন করেছেন। যদিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভিন্ন সুরে। তাদের দাবি, পারিশ্রমিকের সঙ্গে অনুশীলন না করার কোনো সম্পর্ক নেই। রাজশাহীর অপারেশন ইনচার্জ জায়েদ আহমেদ বলেন, ক্রিকেটারদের চাওয়াতেই নির্ধারিত অনুশীলন বাতিল করে তাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
গণমাধমের মুখোমুখি হয়ে জায়েদ বলেন, 'আমরা তাদের বিশ্রাম দিয়েছি। পেমেন্টের কোনো ইসু্য ছিল না। পেমেন্টের ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৬ তারিখ বিকাল বা দুপুরের পর পর আমরা পেমেন্টগুলো দিয়ে দেওয়ার কথা আছে। সে অনুযায়ী আমরা ম্যানেজমেন্ট কাজ করছি এবং প্রতিটা ক্রিকেটারই এ বিষয়টি খুব ভালো করে জানে।'
যদিও এর আগে, ফ্র্যাঞ্চাইজিটির স্কোয়াডে থাকা এক ক্রিকেটার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিপিএল মাঝপথে চলে এলেও এখনো কোনো টাকা পাননি। যে কারণে অনুশীলন বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। দেশিদের পাশাপাশি দলটির কোনো বিদেশি ক্রিকেটারও পারিশ্রমিক বুঝে পাননি। অবশ্য জানা গেছে, ২৫ শতাংশ করে পারিশ্রমিক পেয়েছেন কোচরা।
রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির এক কর্মকর্তা মধ্যরাতে জানিয়েছেন পাওনা টাকার কারণে অনুশীলন বাতিল হয়নি। গতকালকের সিডিউলে বিশ্রামই নাকি ছিল না। যদিও দলের ম্যানেজার জানিয়েছেন উল্টো কথা। পারিশ্রমিক না পাওয়াতে তারা ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিয়েছেন! তবে রাজশাহীর এই কর্মকর্তা স্বীকার করে নিয়েছেন কিছুটা বিলম্ব হয়েছে পারিশ্রমিক দিতে। দেরির কারণও জানিয়েছেন তিনি। মূলত রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের একটি ছক্কা গিয়ে লেগেছিল দুর্বার রাজশাহীর মালিকের স্ত্রীর শরীরে। সেই ঘটনায় তিনি আহত হন এবং চিকিৎসা নিতে যান থাইল্যান্ডে। এ কারণেই নাকি সময়মতো রাজশাহীর ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দেওয়া যায়নি!
রাজশাহী দলের অপারেশন ইনচার্জ জায়েদ আহমেদের ভাষায়, 'অনুশীলন ও পারিশ্রমিকের বিষয়ে আমরা সারা দিন যে খবরগুলো দেখেছি, এটার সাথে আসলে (পারিশ্রমিক না পাওয়ার বিষয়) একদমই সম্পৃক্ত নয়। ক্রিকেটাররা বিশ্রাম চেয়েছিল বলেই ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। এটাই ছিল বিষয়। আমরা এরই মধ্যে প্রতিটি ক্রিকেটারকে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ১৬ জানুয়ারি সবাইকে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। এটার সঙ্গে অনুশীলনের সম্পর্ক নেই।'
ক্রিকেটাররা যে চেক বাউন্স হওয়ার অভিযোগ করেছেন, সেটার বিষয়েও যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন দুর্বার রাজশাহীর এই কর্মকর্তা, 'চেক বাউন্সের ব্যাপারটা হলো, যেই ম্যাচে আমাদের দলের কর্ণধারের স্ত্রী মাঠে ছিলেন, ওই ম্যাচে সাইডলাইনে বসে থাকা অবস্থায় একটি বল আঘাত করে ওনার শরীরে। একটা হাড়ে চিড় ধরা পড়ে। তাই দ্রম্নত তাকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। তিনি সেখানেই ছিলেন।'
শুধু পারিশ্রমিক ইসু্যই নয়, ব্যবস্থাপনাতেও ব্যাপক 'দুর্বল' রাজশাহী। অপি জানালেন ক্রিকেটারদের কিট ব্যাগও নেই! তার ভাষায়, 'কিট ব্যাগ ভারত থেকে অর্ডার করেছিলাম। হেলমেট, প্যাড ও গস্নাভস এসেছে। কিট ব্যাগ আনা হয়নি। বড় একটা কারণ ছিল- ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। অন্যান্য দল হয়তো আরও আগে থেকে শুরু করেছিল। আমরা অনেক দেরিতে শুরু করেছি, বিপিএল যখন ঘনিয়ে আসে, তখন অর্ডার করি।'
দীর্ঘদিন পর বিপিএলে ফিরে এসে খুব একটা চমক দেখাতে পারছে না রাজশাহী। ৬ ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আছে এনামুল হক বিজয় ও তাসকিন আহমেদরা। চট্টগ্রাম পর্বে চারটি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির। আগামী ১৭ জানুয়ারী সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে রাজশাহী।