সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী অর্থবছরে প্রণোদনা-ভর্তুকি কমাতে চায় সরকার

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির অঙ্ক ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে রাখতে চায় সরকার। প্রাথমিকভাবে ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন ভর্তুকির পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভর্তুকির কমানোর উপায় হিসেবে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরেই মোট তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদু্যতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী জুনের আগে আরও দুই থেকে তিন দফা বিদু্যতের দাম বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। এই দাম বাড়ানোর কারণে বিদু্যৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসবে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার পরিমাণ বাজেটে কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ভর্তুকির অঙ্কও কমে যাবে বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত চাহিদা কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার ঘরে।

এখন আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বরাদ্দ নিরূপণ করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা এ খাতে বরাদ্দ সহনীয় করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত ডিসেম্বরে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দের প্রাথমিক একটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সেটি আকার ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন বিদু্যতের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে, প্রণোদনা অর্থ কিছু কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এ খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।

তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদু্যৎ খাতে (১৭ হাজার কোটি টাকা)। গেল অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এলএনজি (আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা (গত অর্থবছরে একই পরিমাণ ছিল)। এছাড়া খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রণোদনা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। নগদ ঋণ খাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার টাকা।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভর্তুকির অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রম্নত বিদু্যৎ, সার ও পানির দাম বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদু্যৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদু্যতের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে 'ভর্তুকি হ্রাস' টেনে ধরা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে