বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থান উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা গত ছয় মাসে ১৬.৫২ থেকে কমে ১৬.১৯ শতাংশ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুনের শেষ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট কর্মী ছিলেন প্রায় দুই লাখ। তাদের মধ্যে ৩২,৫৬৭ বা ১৬.৩২ শতাংশ নারী। এটি ডিসেম্বরের তুলনায় ৩-বেসিস পয়েন্ট বেশি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই আমরা যখন চাকরির সার্কুলার দেই তখন চাকরিপ্রত্যাশী নারীদের কাছ থেকে বেশি আবেদন পাই। আবেদনকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি নারীদের নিয়োগও বেড়েছে। এটিই ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধির প্রাথমিক কারণ।
নারী কর্মকর্তাদের আউটপুট সন্তোষজনক উলেস্নখ করে এ ব্যাংকার বলেন, নারীরা কাজের প্রতি মনোযোগী। তারা সময় অপচয় কম করে এবং নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। এসব কারণে ব্যাংকগুলো নারী কর্মকর্তা নিয়োগে আগ্রহী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা সমানভাবে বাড়েনি। বিদেশি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে, যেখানে মোট কর্মশক্তির ২৪.১১ শতাংশ নারী। ডিসেম্বরের শেষে এ খাতে নারী কর্মকর্তা ছিল ২৩.৯০ শতাংশ।
এছাড়া বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থান উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা গত ছয় মাসে ১৬.৫২ থেকে কমে ১৬.১৯ শতাংশ হয়েছে।
জানুয়ারি-জুন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট ৩,৪০৪ জন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬২৮ জন বা ১৮.৪৫ শতাংশ নারী।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে রাখতে অনেক ব্যাংক ঘরে বসে কাজের (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) সুযোগ দিচ্ছে বলে উলেস্নখ করেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, যদি নারী কর্মীদের অফিসে আসতে অসুবিধা হয়, তাহলে আমরা তাদের এমন কাজ দেই যাতে তারা কর্মজীবনের দিক দিয়ে পিছিয়ে না যায়। এছাড়া অনেক ব্যাংকেই ডে কেয়ার সুবিধা শুরু হয়েছে। এর ফলে মায়েরা সন্তানদের ডে-কেয়ারে রেখে কাজ করতে পারছেন।
তবে উচ্চ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও তা এখনো সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে ব্যাংকগুলোর জমা দেওয়া 'জেন্ডার ইকুয়ালিটি রিপোর্ট' এর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এন্ট্রি লেভেলে নারী কর্মকর্তা ১৬.৯৯ শতাংশ, মধ্যম স্তরে ১৫.৭৭ শতাংশ এবং উচ্চ স্তরে ৯.২৮ শতাংশ।
এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাংকিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ব্যাংকে ৩০ বছরের কম বয়সি নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের হার ২১.৩৩ শতাংশ; যেখানে ৫০ বছরের বেশি বয়সি নারী কর্মকর্তার হার ৯.২২ শতাংশ।
উচ্চ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ কেন কমছে জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মাতৃত্বকালীন সময়ে নারীরা ছুটিতে যান। এছাড়া পারিবারিক অনেক কাজের দায়িত্ব তাদের নিতে হয়, তাই কাজে সমান মনোযোগ দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
'এসব কারণে নারীদের অনেক কিছুতে পিছিয়ে পড়তে হয়। আমরা অনেক নারীকেই এসব কারণে অল্প বয়সে চাকরি ছেড়ে দিতে দেখি, বলেন তিনি।