সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য ডাকছে তোমায়

রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি
  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৯

সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ছোট বড় অসংখ্য ঝিরি-ঝরনা, সবুজ পাহাড়ের উপত্যকা আর অফুরান নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি। পাহাড়ি ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য বদলে দিতে পারে জেলার পর্যটন অর্থনীতি। ঝরনা কেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে জেলার পর্যটন অর্থনীতি যেমন বিকশিত হবে, তেমনই টুরিস্ট গাইডসহ স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হবে। খাগড়াছড়িতে দুর্গম পাহাড়ি পথ হওয়ায় প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব ঝিরি বা ঝরনার কাছে পৌঁছাতে পারেন না। যাতায়াত ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে জেলার অফুরান সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি বিকাশে জেলার ঝরনা কেন্দ্রিক টুরিস্ট স্পটগুলোতে যাতায়াতের জন্য রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মিত হলে পর্যটন অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। এজন্য টেকসই পর্যটন খাতের বিকাশে এখনই উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়িতে সিজক, তৈদুছড়া, শিলাছড়ি, তুয়ারি মাইরাং, রিছাংসহ একাধিক ঝরনা রয়েছে। এক একটি ঝরনার উচ্চতা ৮০ থেকে ১৫০ ফুট। তবে অবকাঠামো সুবিধা না থাকার কারণে সবুজ পাহাড়ের এসব বুনো ঝরনায় পর্যটকদের আনাগোনা কম। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকরা ঝরনার সৌন্দর্য দর্শন থেকে বঞ্চিত হন। এসব এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে সব বয়সি পর্যটক ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বর্ষায় ঝরনা মেলে ধরে তার প্রকৃত সৌন্দর্য। তাই এসব ঝরনায় যাতায়াতের জন্য সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

রিছাং ঝরনা: মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। পাহাড় থেকে অবিরত পানি গড়িয়ে পড়ে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘রিছাং ঝরনা’। যার অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। পাহাড়ি ঝিরি থেকে বয়ে আসা রিছাং খুবই জনপ্রিয় ঝরনা। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে প্রচুর পর্যটক আসে। রিছাং ঝরনার পিচ্ছিল পাথর খণ্ডে স্লাইডটা বেশ রোমাঞ্চকর। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে পাহাড়ের বুক বেয়ে নিচে আছড়ে পড়ছে এ ঝরনা জলরাশি। নিচে নেমে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ।

প্রধান সড়ক ছেড়ে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হবে। এরপর দীর্ঘ সিঁড়ি। প্রায় দুই শতাধিক ধাপ নামতে নামতেই আপনি শুনতে পাবেন প্রকৃতির শন শন শব্দ। আর সিঁড়িটি শেষ হতে না হতেই আপনি দেখা পাবেন কাক্সিক্ষত ‘রিছাং ঝরনা’র।

কক্সবাজারের হিমছড়ি ও মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাতের পর এই রিছাং ঝরনাই হতে পারে দেশের অন্যরকম এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য। খাগড়াছড়ির বেশ কটি ঝরনার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ‘রিছাং ঝরনা’।

তৈদুছড়া: ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু মানে হলো পানির দরজা এবং ছড়া মানে ঝরনা। তৈদুছড়া ঝরনা ৩০০ ফুট উঁচু। পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য পাথরের ধাপ আছে। এই ধাপ বেয়ে পানি গড়িয়ে নিচে পড়ে। এই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতা তৈদুছড়া ঝরনাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। খাগড়াছড়িতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে অন্যতম। জঙ্গলের মাঝে আঁকা-বাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলে তৈদুছড়া ঝরনার পানি। শীতল স্বচ্ছ টলটলে পানির কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। পুরোটা পথ ট্রেকিং করতে হয়। খাগড়া ছড়ির দীঘিনালার জামতলী হয়ে ঢুকলে তুলনামূলক সহজ রাস্তা পাওয়া যায়। ধরন- ঝিরি ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ। তবে তৈদুছড়ার ০১ থেকে তৈদুছড়া ০২ যাওয়ার পথটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আসা-যাওয়ায় প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টার ট্রেকিং। ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরে পাহাড়ের নিচে। আর সেখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পাথর যা দেখলে মন ভরে উঠবে আনন্দে।

ঝরনা দেখতে আসা পর্যটক রেজা খন্দকার, মো. সেলিম, আবু হানিফ ও মো. খলিলুর রহমান জানান, আমরা খাগড়াছড়িতে বেশ কয়েকটি ছোট বড় ঝরনা দেখেছি। সবই আকর্ষণীয়। তবে যাতায়াতের পথ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝরনা দেখলে যে কোনো পর্যটক মুগ্ধ হবেন। আরও যেসব ঝরনা আছে সেগুলোতে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ করলে সহজেই যাওয়া যাবে।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের সমন্বয়ক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষায় খাগড়াছড়িতে পর্যটন সমাগম বেড়েছে। ঝরনা কেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে জেলার পর্যটন অর্থনীতি আরও বিকশিত হবে।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ঝরনায় পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে