শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আনোয়ারায় সবজি চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান

এম আনোয়ারুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:১২
আনোয়ারায় সবজি চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান

আনোয়ারা, বাঁশখালি, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া চার উপজেলার মোহনা সাঙ্গু নদীর তীর। দীর্ঘ তিন কিলোমিটার তীরবর্তী চর এলাকাটি আনোয়ারা উপজেলার সবজির প্রাণ কেন্দ্র। এলাকা ফকিরার চর নামে পরিচিত। ফকির হাটের মিয়া হাজী দৌলতের মাজার সংলগ্ন বিস্তৃত মাঠজুড়ে কৃষকরা উৎপাদন করে আসছে নানা ধরনের সবজি। বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখানে সবজির বাম্পার ফলন হয় বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। সিম, টমেটো, বেগুন, কপি ও বিদেশী কয়েকটি সবজি উৎপাদনে প্রতিবছর বাজিমাত করেছে কৃষকরা। এসব সবজি স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের বড় বড় কাঁচাবাজর গুলোতে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১৩শ ২৬ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এখন ৭শ হেক্টর মতো আবাদ হয়ে গেছে বাকিগুলো চলমান রয়েছে। যার মধ্যে হাইলধর, বরুমচড়া, জুঁইদণ্ডি, বটতলী হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয় হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরার চরে। এখানে উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে আলু, বেগুন, সিম, টমেটো, কফি, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, সরিষা আর ব্যাপকভাবে হয় চীনা বাদাম। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন সবজিও হয় ব্যাপক। এবং লাল মরিচের জন্য বিখ্যাত এই চর।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কীটনাশক ব্যাবহার না করে পোকা দমনে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। পোকা দমনে অতীতে কৃষকরা হরেকরকমের কীটনাশক ব্যবহার করলেও বর্তমানে বাজারে কীটনাশকের দাম চড়া এবং জমিতে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কৃষকরা নতুন এই কৌশলের মাধ্যমে পোকা ধমনের দিকে ঝুঁকছে। পোকা দমনের এই ফাঁদ পেরিওম্যান ফাঁদ হিসেবে পরিচিত। এই ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমনে তারা আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছেও বলে জানান কৃষকেরা। এছাড়া মরিচ, সিমসহ বিভিন্ন নতুন নতুন সবজি রোপন করছেন কৃষকেরা।

ইছাখালী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ কাসেম জানান, বাদাম, শসা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়সসহ ৪০ কানির চাষাবাদ করা হয়েছে । কিছুদিন আগে ২হাজার কেজি মতো শসা বিক্রি করা হয়।কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া এখন খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। এখন মরিচ রোপণের কাজ চলছে।

মাহমুদুল হক নামের আরেক কৃষক জানান, টমেটো, লাল মিষ্টি আলু, শসা, মিষ্টি কুমড়া, মূলাসহ বহু ধরনের সবজির চাষাবাদ করা হয়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকাশ দাশ বলেন, এই চরের জমি খুবই উর্বর। এ চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যে কোনো ফসল বেশি হয়। গত কয়েক বছর ধরে সাঙ্গু নদীর দুই চরে সবজি উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটছে। উপজেলার সমতল এলাকায় যে, পরিমাণ সবজি চাষ হয়, তার চেয়ে বেশি সবজি হয় হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরার চরে উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগ সবজির এই প্রাণকেন্দ্র নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে । সেই অনুযায়ী কৃষকদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে ।

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, ফকিরার চর আনোয়ারার কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা৷ উৎপাদিত সবজি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।৷ প্রতি বছর নতুন নতুন সবজির চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে এখন ভুট্টা, বাদাম, ঢেঁড়স উৎপাদন করা হচ্ছে। চরটিতে কৃষকদের জন্য সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে । সেচের কোনো সমস্যাও নেই। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে