বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দখল ও ভরাটে  কুতুবদিয়ার পাইলটকাটা খালের বেহাল অবস্থা

কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৩
দখল ও ভরাটে  কুতুবদিয়ার পাইলটকাটা খালের বেহাল অবস্থা

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার প্রাচীনতম এবং দ্বীপের পাঁচ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাইলট কাটা খালটি আজ দখল ভরাটের ফলে নাব্যতা হারাতে বসেছে। সারা দেশ ব্যাপী নদী- খাল খনন এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পাইলটকাটা খালের ব্যাপারে কোন ধরনের দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। দ্বীপের অত্যন্ত প্রবাহমান এবং গতিশীল পাইলটকাটা খাল এক সময়ে ছোট-বড় অনেক নৌ-যান চলাচল করতো। খালে জেলেরা মাছ শিকার করতো। প্রান্তিক চাষীরা খালের পানি সেচে লবনচাষাবাদ করতো। দ্বীপের বৃষ্টির পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়ে। তখন লোকজনের জীবন জীবিকায়নের অন্যতম মাধ্যম ছিল পাইলটকাটাখালটি। বর্তমানে এ সব কিছুই যেন এখন সোনালি অতীত! কেননা দিন দিন দখল ও ভরাটের ফলে সরু হয়ে নাব্যতাহীন হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এ খালটি।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রবাহমান পাইলটকাটা খালটি দখল ও ভরাটের ফলে সংকুচিত এবং কোনঠাসা হয়ে কোন রকমে নিজ অস্তিত্ব রক্ষায় যুদ্ধ করে যাচ্ছে খাল খেকোদের সাথে। পাইলটকাটা খালটি বড়ঘোপ ইউনিয়নের আজম কলোনী এলকার পূর্ব পার্শ্বস্থ কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে সৃষ্টি হয়ে পর্যায়ক্রমে কৈয়ারবিল, লেমশীখালী, দক্ষিণ ধুরুং এবং উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। খালের আশপাশের বাসিন্দারা এখনো এই খালের পানি সেচ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে প্রতিনিয়নত খালটি দখল ও ভরাটের ফলে নাব্যতাহীন হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর দৈনিক যায়যায়দিনকে জানান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের আওতাধীন পাইলটকাটা খালটির প্রশস্থ ছিল ৫'শ ২০ ফুট, দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। যা বর্তমানে প্রশস্থ ১'শ ফুটও নাই এবং দৈর্ঘ্যও কমে আসছে। এভাবে দখল ও ভরাটের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে খালটি।

একইভাবে কৈয়ারবিল এলাকা থেকে খালটি শেষ হয়ে খালের পূর্ব পাশে লেমশীখালী ও পশ্চিম পাশে দক্ষিণ ধূরুং এর সাথে সংযোগ স্থাপন করে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের উত্তর পাশে গিয়ে শেষ হয়। দক্ষিণ ধূরুং ও লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৯৫০ সালের দিকে বড় বড় নৌকায় করে চট্টগ্রাম, ঝালাকাঠি ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই খাল দিয়ে দ্বীপে পণ্য আনা নেওয়া করা হতো। কিন্তু এখন সে সবই রূপকথার গল্প বল্লে চলে। এ ছাড়া, উপজেলার পানি নিষ্কাশনে খালটি বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বর্তমানে খালের দু'পাশের অববাহিকা দখল করে অনেকে লবন চাষাবাদ, বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের তৈরী ও খালের তীরে বসতঘর তৈরী করে এবং বর্জ্য ফেলে খালটি একেবারে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে গেছে। তাই কুতুবদিয়ার প্রাচীনতম খালটি দখল ও ভরাটমুক্ত করে দ্রুত খালের নাব্যতা ফিরিয়ে এনে দ্বীপের প্রান্তিক চাষিসহ সর্বস্তরের মানুষের জীবন জীবিকায়নের পথ সুগম করার দাবী জানান তাঁরা।

এদিকে, অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে খাল দখল করে ভরাট করার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন সাড়া পাননি বলে দাবী করেন কৈয়ারবিলের বাসিন্দা প্রান্তিক চাষি আবু শামা।

দ্বীপের পরিবেশ প্রকৃতি এবং জলবায়ু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সংগঠন কুতুবদিয়া দ্বীপ সুরক্ষা আন্দোলন (কেডিএসএ) এর সভাপতি এম, শহীদুল ইসলাম বলেন, কুতুবদিয়ার হৃদপিন্ড খ্যাত পাইলটকাটা খাল। এ খালের উপর নির্ভরশীল দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ। দ্বীপের প্রান্তিক চাষীর জীবিকায়ন ও মৎস্য শিকারির অন্যতম মাধ্যম পাইলটকাটা খাল। একটা সময়ে দ্বীপের নৌ বাণিজ্যের যোগাযোগের প্রধান ও সহজ পথ ছিল এটি। দ্বীপের বৃহৎ খালটি পুরো দ্বীপের মোট ছয়টি ইউনিয়নের পাঁচ ইউনিয়নের বিশাল এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমানে দখল ও ভরাট এবং যথাযথ উদ্যোগের অভাবে নাব্যতাহীন হয়ে আজ মৃত প্রায় খালটি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটকালে দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী পাইলটকাটা খালের দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে প্রান্তিক চাষির জীবিকায়নের দ্বার উন্মোচনে এবং খালের জৌলুস ফিরিয়ে এনে একটি প্রবাহমান খালের ধারায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের অপরিহার্য দাবি বলে মনে করে তিনি।

এ বিষয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম দৈনিক যায়যায়দিনকে জানান, বিষয়টি অবগত না। খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে