লক্ষ্মীপুরে গভীর রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কম্বল মোড়ানো একটি শিশু দেখতে পান পথচারী। এরপর খবর পেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের পর পুলিশ তার পরিচয় শনাক্ত করে। পরে মাকে থানায় ডেকে নিয়ে শিশুটিকে তার কোলে তুলে দেওয়া পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, রাস্তায় পড়ে থাকা শিশুটির নাম মালিহা ইসলাম ওহি। তার বয়স মাত্র ৯ মাস। তার মায়ের নাম মরিয়ম বেগম। গত চারদিন আগে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ অগ্রণী স্কুলের ক্যাম্পাস থেকে তাকে চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত এক নারী। কমলনগর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল জলিল বলেন, রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে থানার কাছে উপকূল কলেজের পেছনে মাটির রাস্তা দিয়ে জনৈক পথচারী ইউছুপ বাড়ি যাওয়ার সময় কম্বল মোড়ানো একটি শিশু দেখতে পান। এ সময় তিনি চিৎকার দিয়ে লোকজন জড়ো করেন। পরে এলাকার লোকজন থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং তার পরিচয় নিশ্চিত করে। এর আগে শিশুটির মা থানায় একটি জিডি করেন। সে সূত্রে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রাখে। এদিকে চুরির সঙ্গে জড়িত নারীকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

শিশু মালিহার মা মরিয়ম বেগম বলেন, গতরাত সাড়ে ১২ টার আগ পর্যন্ত আমরা থানায় ছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি আসার ১০ মিনিটের মাথায় থানা থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে। থানায় গিয়ে আমার মেয়েকে দেখতে পাই। পরে পুলিশ আমার কাছে মালিহাকে ফিরিয়ে দেয়।

ভোলায় সুষ্ঠুর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড

তিনি বলেন, চারদিন পর আমার মেয়ে আমার কোলে ফিরেছে। আমার বুকটা ভরে গেছে। চুরির সঙ্গে যে নারী জড়িত তাকে যেন গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়। আমি তার বিচার দাবি করছি।

ঘটনার বিবরণে মরিয়ম বেগম জানান, ওহির বড় বোন সাবিহা ইসলাম মিহি (৬) অগ্রণী রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে মিহি ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এতে মালিহাকে নিয়ে তার মা মরিয়মও বিদ্যালয়ে যায়। মিহিকে সাজানোর জন্য চুলের ক্লিপ ও বেল্ট আনাতে বিদ্যালয়ের পাশেই বাজারে যান মা মরিয়ম। এ সময় মায়া নামে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর কাছে মালিহাকে রেখে যান তিনি।

এরমধ্যেই মায়ার কোল থেকে অচেনা এক নারী মালিহাকে নিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে শিশুটিকে নিয়ে সটকে পড়েন ওই নারী। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে বিদ্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা যাচাই করে দেখতে পায় মাথায় লাল হিজাব, মুখে মাস্ক ও কালো বোরকা পরিহিত এক নারী শিশুটিকে কোলে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা যাচাই করেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।

শিশু চুরির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উদ্ধারের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন করে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী। তাকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চালায়। অবশেষে চারদিন পর শিশুটি উদ্ধার হয়ে তার মায়ের কোলে ফিরেছে।

যাযাদি/ এস