রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে জলাবদ্ধতার কারণে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত

তন্ময় মিত্র বাপী, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:২৭
কেশবপুরে জলাবদ্ধতার কারণে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত

যশোরের কেশবপুরে স্থোয়ী জলাবদ্ধতার কারনে চলতি মৌসুমে কেশবপুরের ৫ ইউনিয়নের ২০টি বিলে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো আবাদ করতে পারছেন না। শ্রী নদীর নাব্যতা না থাকায় কেশবপুরের পূর্বাংশের বাগডাঙ্গা, কালিচরনপুর, খুকশিয়া, বুড়ুলি, গরালিয়া বিলসহ ২০টি বিলের ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হবে না। টানা ৪ বছর স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে জমিতে বোরো আবাদ করতে না পেরে এসব এলাকার হাজার হাজার কৃষক অভাব অনাটনে সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন।

সরেজমিন জানা যায়, কেশবপুরের পূর্বাংশের সুফলাকাটি, পাঁজিয়া, গৌরিঘোনা, মঙ্গলকোট ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নের ২২টি ছোট বড় বিল রয়েছে। বৃষ্টির জমে থাকা বিলের পানি বিভিন্ন খাল দিয়ে শ্রী নদীতে নিস্কাশিত হতো। কিন্তু পলি জমে শ্রী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ৮০’র দশক থেকে কেশবপুরের ৫ ইউনিয়নের বিশাল এলাকার ২২টি বিল স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। বিল গরালিয়া গত বছর পর্যন্ত বোরো আবাদ হলেও হরিহর নদী দিয়ে পানি বের হতে না পেরে এবার বিল গরালিয়ায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রুপ ধারন করেছে। এ বছর বিলের জমিতে ইরি বোরো ধানের আবাদ হবে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের হেফজুর রহমান, ছলিল উদ্দিন, জামাল হোসেন জানান, এবার ঘের মালিক পানি সেচ দিয়ে বের করতে পারছে না।

কারন পানি বের হওয়ার কোন পথ নেই। রাজনগর বাঁকাবর্শী গ্রামের ইয়াছিন আলীকে বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে ফেলে দিতে দেখা যায়। তিনি জানান, গরালিয়া বিলে তার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য বীজতলা তৈরী করেছিলেন। কিন্তু বিলে পানি জমে থাকায় ধান চাষ করতে না পেরে ধানের চারা ফেলে দিতে হচ্ছে।

বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে গত চার বছর ধরে কোন ধরনের ফসল হয় না। সারা বছর বিলসহ বাড়ি ঘরে জমে থাকে পানি। মনোহরনগর ও বাগডাঙ্গা বিলের পানি ডায়ের খাল দিয়ে শ্রী নদীতে নিস্কাশিত হতো। নদী ও খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর পানি বের হতে পারে না।

বাগডাঙ্গা গ্রামের রবিন্দ্রনাথ সরকার জানান, মনোহরনগর ও বাগডাঙ্গা বিলে এবছরও ধান হবে না। ৪/৫ বছর ধরে কোন আবাদ হয় না ওই দুই বিলে। বাগডাঙ্গা গ্রামের বিষংঙ্কর সরকার, অমিও সরকারসহ অনেক কৃষক জানান, বিলে তাদের ২ থেকে ৮ বিঘা জমি থাকলেও ৪ বছর ধরে ধান চাষ না হওয়ায় তারা প্রতিদিন সকালে শ্রমিকের কাজ করতে অন্য উপজেলার ফুলতলা, জামিরাসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। মিলন সরকার, পালিতা সরকার, রিতা সরকার, গৌতম, অসীম সরকারসহ ২শ' বাড়িতে এখনও পানি জমে রয়েছে। জগদিশ সরকারের উঠোনে হাটু পানি। ঘর থেকে রান্নাঘর ও গোয়ালঘরে যাতায়াতের জন্য উঠোনে বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, এভাবে ৬ মাস জল থাকে বাড়িতে। ঘেরের পানি সেচ দিয়ে খালে ফেললে তা বের হতে না পেরে বাড়িঘর তলিয়ে যায়।

খুকশিয়া বিলের কৃষক ময়নাপুর গ্রামের মহেন্দ্র মন্ডল জানান, গত ৪ বছর তিনি কোন ফসল ফলাতে পারেননি। তার গ্রামের সকলেরই একই অবস্থা। কালিচরনপুর গ্রামের মহিতোষ, কৃঞ্চপদ মল্লিক, গোবিন্দ, তপন, সাধনসহ অনেকেই জানান, টিআরএম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কোন ফসল করতে পারেন না। মাছের ঘেরে কাজ করে কোন রকম তাদের সংসার চলে। এই গ্রামের অনেকেই জলাবদ্ধতার কারনে এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে এলাকাবাসি জানান।

জলাবদ্ধ বিলগুলো হলো বিল খুকশিয়া, নারায়নপুর বিল, কালিচরনপুর বিল, বড়–লি বিল, হাড়িয়াঘোপ বিল, কায়েমখোলা বিল, সারুটিয়া বিল, কৃঞ্চনগর বিল, ডহুরি বিল, বাগডাঙ্গা বিল, মনোহরনগর বিল, হদের বিল, গড়ভাঙ্গা বিল, গরালিয়া বিল, নোনাডাঙ্গা বিল, বলধালি বিল, আলতাপোল বিল, টেপুর বিল, ভায়না বিল, চুয়াডাঙ্গা বিল, ঘাঘা বিল, পাথরা বিল ও আগরহাটি বিল। সরকারি হিসেবে এই ২২টি বিলে মোট জমির পরিমান ৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর।

এর মধ্যে ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হবে না বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। তবে বাস্তবে আরও বেশী পরিমান জমিতে আবাদ হবে না বলে কৃষদের দাবি। গোটা উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমি।

কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, নদী ও খালের তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় এসব বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিলের পানি সেচ দিয়ে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষকরা বোরো আবাদ করতে পারছে না। জলাবদ্ধতার কথা প্রতিটি মিটিং তোলা হয়েছে তবে কোন ব্যবস্থা হয়নি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে