দক্ষিন চট্টগ্রামের পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ নিয়ে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে চলছে আন্দোলন। বিভিন্ন কারনে মাদরাসার মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাহ শিক্ষক ও ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর মহা পরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামজা পদত্যাগ করে মাদ্রাসা থেকে বের হলেও তার অনুসারীরা আন্দোলনের নামে ভাংচুরসহ বিভিন্ন তান্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেছেন আবু তাহের নদভীর অনুসারীরা।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মাদরাসার মজলিশে শুরা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পুরাতন মজলিশে শুরা কমিটির ভোটের মাধ্যমে পুনঃগঠন করা হয়। শুরা কমিটিতে নতুন ও পুরাতন মিলে ২৭ জন শুরা সদস্য উপস্থিত ছিলেন৷ তাদের মধ্যে পুরাতন মজলিশে শুরার ১৬ জনের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত ছিলেন। এসময় আন্দোলনের নামে নেতৃত্ব দেওয়া মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কওমী মাদরাসা পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহকে নিয়ে দুইটি পক্ষ আন্দোলনে নামে। ওবায়দুল্লাহ হামযার পরিবর্তে মাদরাসার মজলিশে এদারী আহবায়ক মওলানা আবু তাহের নদভীকে মহা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওবায়দুল্লাহ হামযার অনুসারীরা মাদরাসায় হামলা করার অভিযোগ ওঠে। দুই পক্ষের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে খোদ পুলিশ প্রশাসনও হিমশিম খেয়েছে।
বুধবার রাত ৯ টার দিকে মজলিশে শূরা কমিটির সদস্য ফটিকছড়ি ওবায়দিয়া নানুপুর মাদ্রাসার মুহতামিম সালাউদ্দিন নানুপুরী পুন:গঠিত শুরা কমিটির নাম গুলো পড়ে শুনান গণমাধ্যম কর্মীদের। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাবুনগরী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মহিবউল্যাহ বাবুনগরী, হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল খলিল আহমদ কাশেমী, জিরি মাদ্রসার মুহতামিম মুফতি খোবাইব, শুলকবহর মাদ্রসার মুহতামিম মওলানা মো: হারুন, ফেনী মাদ্রাসার আফজালুর রহমানসহ মজলিশে শূরার ২৭ জন।
মজলিশে শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা মো. খোবাইব বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে মাদ্রাসার সাবেক মহা পরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাহ'র লোকজন তান্ডব চালিয়েছে। যার কারনে মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হয়েছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের যৌথ স্বাক্ষরে অনাস্থা দেওয়ায় ওবায়দুল্লাহ হামযাহকে মাদরাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পরর্বতীতে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। মাদ্রাসার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাংবাদি, পুলিশ প্রশাসনসহ যারা ভুমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সূরা কমিটি বৈঠক শেষে মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী মুহতামিমদের ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, পুরাতন শুরার ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন সহ ১৯ জন শুরার সদস্যের উপস্থিতিতে মোট ২৭ জন আলেমের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়েছে।
তাদের মধ্যে, ছদরে মুহতামিম করা হয়েছে (মাদ্রাসার সভাপতি) হিসেবে শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ, মুহতামিম(পরিচালক) করা হয়েছে আল্লামা আবু তাহের নদভী, সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন, মাওলানা ওসামা হারুন। এছাড়াও বর্তমান মুহতামিম আগামী শুরায় নায়েবে মুহতামিম এবং মুইনে মুহতামিমদের নাম প্রস্তাব করবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
সূরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, জিরি মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মাওলানা খোবাইব, শুলকবহর মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা হারুন, রাজঘাটা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হাবিবুল ওয়াহেদ, শুরা সদস্য ফেনী সর্সদী মাদ্রাসার মুফতি আফজালুর রহমান, হাফেজ আহমদ উল্লাহহ, মাওলানা সামসুদ্দীন জিয়া, মাওলানা জাহেদ উল্লাহ, মুফতি একরাম হোসেন অদুদী, হাজী এনাম, আবদুর রহিম চৌধুরী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা আমান উল্লাহ, মাওলানা আব্দুল হক হক্কানি, মাওলানা রিজওয়ান জমিরাবাদী, মুফতি আশেক প্রমুখ।
যাযাদি/ এস