মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

ফেনীতে প্রেমঘটিত কারণে নিহত কলেজ ছাত্রী পাখির দাফন সম্পন্ন 

'স্বজনদের দাবি ডেকে নিয়ে হত্যা'
ফেনী প্রতিনিধি
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৮
আপডেট  : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯
ফেনীতে প্রেমঘটিত কারণে নিহত কলেজ ছাত্রী পাখির দাফন সম্পন্ন 

ফেনীতে প্রেমঘটিত কারণে নিহত কলেজ ছাত্রী ফাতেমা আক্তার পাখি (১৮)'র দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার (৪ মার্চ) জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর নিহতের পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

নিহত পাখির পরিবারের সদস্যরা জানান,জেলার শর্শদী ইউনিয়নের চোছনা গ্রামের সওদাগর বাড়ির মো. মিয়াধন মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে ২০১৮ সালে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির । ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সালাউদ্দিনের মায়ের মৃত্যুর পর তার কথা মতো পাখি তাদের বাড়িতেও গিয়েছিল।

তাঁদের দাবি, শুরু থেকেই সালাউদ্দিনের ভাই বাপ্পি ও বোন নাদিয়া সবসময় পাখির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছিলেন।কারণ তারা এ সম্পর্ক কখনও মেনে নিতে পারেনি। এজন্য কৌশলে পাখিকে ওই বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।নিহত পাখি ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাশ করে অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্র জানায়,একই গ্রামের সওদাগর বাড়ির মো. মিয়াধন মিয়ার ছেলে পোল্যান্ড প্রবাসী সালাউদ্দিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর সালাউদ্দিন পোল্যান্ডে চলে যান।

সম্প্রতি দেশে ফিরে আসে সে।এরপর থেকে বিভিন্ন সময় পাখির পক্ষ থেকে বিয়ের কথা বললেও সময় ক্ষেপণ করতে থাকে সালাউদ্দিন।পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।একপর্যায়ে পাখিকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় সে।

প্রসঙ্গত, রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি )ফেনী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বারাহীপুর এলাকা থেকে ফাতেমা আক্তার পাখি (১৮)'র ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই এলাকার এড. অলি উল্ল্যাহ ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এরপর ওই বাসার ভাড়াটিয়া সালাউদ্দিনের বোনের শ্বশুর আবুল কাশেম বলেন, দুপুর ১২টার পর হঠাৎ অপরিচিত একজন মেয়ে আমাদের ঘরের ভেতর একটি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও খুলতে না পেরে দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ফ্যানের সঙ্গে মেয়েটির ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই।

নিহত পাখি জেলার শর্শদী ইউনিয়নের চোছনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। শহরের নাজির রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো সে।

ঘটনার পর বাসার মালিক আবুল কাশেমের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন,এসময় ঘরে আমি ও আমার দুই পুত্রবধূ ছিলাম। আমাদের রান্নাঘরে রংয়ের কাজ চলছিল। এমন সময় হঠাৎ ওই মেয়ে দৌড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার বড় বউয়ের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সে। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

সালাউদ্দিনের বোন সাফিয়া আক্তার নাদিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক ছিল সেটা এর আগে আমরা কখনও শুনিনি। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করার পর তার পরিবারের লোকজন এখানে এলে তাদের মুখ থেকেই প্রথম আমরা এমন কথা শুনি। এর আগে কখনও তার সাথে আমার দেখা বা কথা হয়নি। দেশে এলে আমরা ভাইকে বিয়ে করাবো এমন তথ্য জেনেই সম্ভবত মেয়েটি এমন কাজ করেছে।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ময়নাতদন্তের পর নিহতের লাশ দাফন করা হয়েছে।সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ মামলা করেনি ৷

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেন, ঘটনার আগে ওই মেয়েটির পরিবার পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে এসেছিল। তখন এ ঘটনা শুনে পরিবারের সদস্যদের সাথে উপস্থিতিতেই নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে