সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু পরিবারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে “অদম্য”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু পরিবারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে “অদম্য”

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি শিশু পরিবারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন পেজ “অদম্য”। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা তিতাসপাড়ায় অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা)।

সরকারি এই শিশু পরিবারে মূলত এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের আবাসস্থল। “অদম্য” পেজে বিক্রি করে শিশু পরিবারের শিশুদের হাতে কাজ করা শাড়ি ও পাঞ্জাবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি শিশু পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের উপরে হলে কোন শিশু এখানে থাকতে পারবে না। তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের আদেশে এখানে বসবাস করা যায়।

শিশু পরিবারে যারা বসবাস করে তাদের প্রত্যেকেই কারো বাবা বা মা নেই, আবার কারো বাবা-মা দু’জনই নেই। শিশু পরিবারটি মূলত এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের আবাসস্থল।

সমাজের এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বয়স যখন ১৮ বছর হবে, তখন তারা তাদের স্বজনের কাছে ফিরে যায়। কিন্তু স্বজনদের কাছে গিয়ে তারা কি করবে বা কেমন থাকবে ? সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা শিশু পরিবারের শিশুদের সেলাই কাজের পাশাপাশি শাড়ি, পাঞ্জাবিতে ব্লক ও শাড়িতে নকশী কাজের প্রশিক্ষণ দেন।

প্রশিক্ষণ পেয়ে এখানকার শিশুরা এখন শাড়ি, পাঞ্জাবিতে ব্লক ও শাড়িতে নকশার কাজ করে। তাদের এই পন্য বিক্রয়ের জন্য প্রায় দুই মাস আগে সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা ব্যক্তি উদ্যোগেই “অদম্য” নামে অনলাইন ভিত্তিক পেজ খোলেন। যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি তারাই মূলত অদম্যতে কাজ করছে।

সরজমিনে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিতে কাজ করা নিয়ে ব্যস্ত। ছাপার কাজ শেষ হওয়া বেশ কিছু শাড়ি ও পাঞ্জাবি শিশু পরিবারের মাঠে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। এসব কাজের দেখভাল করছেন শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা। তিনি তাদেরকে নানাভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। অন্য শিশুরা নিজেদের পোষাকে কাজ করা নিয়ে ব্যস্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে শিশুদেরকে ১লাখ টাকা দেন। মন্ত্রীর দেয়া এক লাখ টাকায় শিশু পরিবারের ১০০ সদস্য একই রকমের পোশাক পড়তে সেগুলোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে এখানকার শিশুদেরকে বিনামূল্যে সেলাই, বøক ও বাটিক সংক্রান্ত নানা ধরনের কাজ শেখানো হয়। প্রথমে শিমূরা তাদের নিজেদের কাপড় সেলাই করা শেখে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কাপড় বিক্রির কাজে সিনিয়র কয়েকজনকে লাগানো হয়।

প্রায় ২ মাস আগে অনলাইন ভিত্তিক ‘অদম্য’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে তাদের হাতে তৈরি করা কাপড় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে এখনো তেমন চাহিদা নেই। তবে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংগঠন যারা ঈদে উপহার হিসেবে কাপড় দিবে তারা এখন মূলত অর্ডার দিচ্ছেন।

দেড় থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি ও পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে অদম্যতে। মূলত রওশন আরার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই চালু হয়েছে “অদম্য”।

“অদম্য” নিয়ে কাজ করা অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার জানান, ১২ বছর ধরে তিনি এই শিশু পরিবারে আছেন। ১৮ বছর বয়স হলে তাকে মাতৃহীন পরিবারে যেতে হবে।

তিনি বলেন, চাকুরির জন্য দুইবার পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু চাকরি হয়নি। তখন আমাদের ম্যাডামকে বলি আমাদের জন্য কিছু করার জন্য। এ অবস্থায় তিনি শিশু পরিবার থেকে ফ্রিতে কাপড়ে হ্যান্ডপ্রিন্ট, বøক, বাটিক করার কাজ শিখেছেন।

এটা থেকে আয়ও হচ্ছে। গত মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে তার। অদম্য নামে একটি ফেসবুক পেজে এসব কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাড়িতে গেলেও হাতের এই কাজ করে আয় করা সম্ভব হবে। এতে তিনি খুব খুশি।

অদম্য নিয়ে কাজ করা অনার্স প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্রী পপি আক্তার বলেন, তার মা-বাবা কেউ নেই। ম্যাডাম প্রথমে আমাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই প্রশিক্ষণের ফলে আমরা এখন কাপড়ে হাতের কাজ করছি। আমাদের তৈরী বøক, বাটিক, হ্যান্ডপ্রিন্টের শাড়ি ও পাঞ্জাবি অদম্য নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করছি। গত মাসে ১৬ দিন কাজ করে আমার ৬ হাজার টাকা আয় হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) উপ-তত্ত¡াবধায়ক রওশন আরা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু পরিবারে সাড়ে তিন বছর ধরে কর্মরত আছি। এখানে যারা ভর্তি হয় তাদের বয়স ৬ থেকে ৯ বছর বয়সের মধ্যে হতে হয়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা শিশু পরিবারে থাকতে পারে। তবে ব্যক্তি ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য সমাজসেবার অনুমতি সাপেক্ষে কেউ কেউ থাকতে পারে। নতুবা ১৮ বছরের পর তাকে বাড়িতে ফিরতে হয়।

তিনি আরো বলেন, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা বাড়ি ফিরে কি করবে? তারা প্রায় সময় চাকরির জন্য আমার কাছে আসতো। চাকরি না করে কি করা যায় সেই চিন্তা থেকে গত দুই মাস আগে ‘অদম্য’ নামে ফেসবুক পেজ খোলাহয়। অদম্যর মাধ্যমে ১৮ বছরের বেশী ১১ জন শিক্ষার্থীকে বøক, বাটিক, প্রিন্ট ও নকশি কাঁথা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা বøক, ডাইস, এমব্রডারি ও নকশির কাজ করছে।

বাইরে তারা যে পারিশ্রমিক পেতো, এখান থেকেও সেই পারিশ্রমিক পাচ্ছে তারা। সময়ের সাথে সাথে তারা অভিজ্ঞ ও দক্ষ হচ্ছে। এই দক্ষতার ফলে তারা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে। এখন তারা স্বপ্ন দেখছে তাদের নতুন জীবন নিয়ে। অদম্য তাদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে এটাই স্বার্থকতা।

তিনি আরো বলেন, গত দুই মাসে অদম্যের মাধ্যমে প্রায় দুইশত শাড়ি ও পাঞ্জাবি বিক্রি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সরকারি নিয়ম অনুসারে কোনো শিশু এখান থেকে চলে গেলে বাড়িতে গিয়েও সেই কাজ করে আয় করতে পারবে। মূলত তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়াই আমার লক্ষ্য। যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে