বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরেও কাজ শেষ হয়নি বীরনিবাসের, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ  

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৭:২০
এক বছরেও কাজ শেষ হয়নি বীরনিবাসের, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ  

এক বছরেও বীরনিবাসের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীরমুক্তিযোদ্ধারা। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত তালিকায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ৪৩টি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বীর নিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এক বছর ধরে বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখন পর্যম্ত কোনো ঘরের কাজ অর্ধেকও শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে বীর নিবাস নির্মাণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে উপজেলার একাধিক বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে এ উপজেলার ৪৩টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ পান মেসার্স রাফি ট্রেডার্স। এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো ঘরের শুধু চারটি দেয়ালই নির্মাণ হয়েছে। আবার কিছু ঘরের ছাদ পেটানোর পরেই থমকে গেছে নির্মাণ কাজ। এমন ধীর গতিতে কাজ করায় ক্ষুব্ধ অনেক বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার। তাদের দাবি, বসত ঘর ভেঙে বীর নিবাস নির্মাণের জায়গা দেন তারা। কিন্তু ঘর সম্পন্ন না হওয়ায় ঘরের সংকটে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কোন কোন বীর নিবাসের শুধুমাত্র চারটি দেয়াল উঠেছে। কিছু ঘর ছাদ পেটানো হলেও বাকি কাজ রয়েছে অসম্পূর্ণ। এসময় অভিযোগ করে একাধিক বীরমুক্তিযোদ্ধারা জানান, চার পাশের দেয়াল করে গেছে ৭/৮ মাস হলো আর কোনো খবর নেই। উপজেলা প্রশাসনের কেউ একদিনও এসে দেখলো না কি নির্মাণ করা হচ্ছে।

বাল্লা ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, "আজ ৭/৮ মাস ধরে চার পাশের দেয়াল গেঁথে গেছে। আর কোনো খোঁজ খবর নাই। যারা কাজ করছে তারাও ঠিক মতো কাজ বোঝে না। আর কেউ কোন খোঁজ খবরও নেয় না। ফেব্রুয়ারি মাসেই বীর নিবাস পাওয়া আমার সহযোদ্ধা ভাইদের পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা দুনিয়া থেকে চলে গেছে। তারা এই ঘর দেখে যেতে পারল না। ঘরে শুয়ে যাওয়া ভাগ্যে জুটলো না। আমিও কবে জানি চলে যাই। ঘরে শোয়ার ভাগ্য আমারও হবে কিনা জানিনা।"

জগৎবেড় গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জানান, "ছয়মাস আগে চারপাশের দেয়াল গেঁথে চলে গেছে আর কোনো খবর নেই। থাকার ঘর ভেঙে এই বীর নিবাসের জায়গা দিয়েছি। এই কাজ শেষ না হওয়ায় আমার খুব সমস্যা হচ্ছে। জিনিসপত্র সব বাইরে বের করে রাখছি। সামনে বৃষ্টির দিন আসছে। এখন তো আমাদের থাকতে খুব কষ্টে হচ্ছে। কাজ ধরবে ধরবে করে আর কাজ ধরছে না।"

নাওডুবি গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত আমজাদ হোসেন চৌধুরীর ছেলে হ্যাপি চৌধুরি জানান, এক বছর ধরে কাজ শুরু হয়েছে। এখনও ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ধরে নাই। শুধুমাত্র চারপাশের দেয়াল করা হয়েছে। সেটাও ৭/৮ মাস আগে। এরমধ্যে আর কোনো কাজ হয়নি। প্রায় একমাস আগে ইউএনও মহোদয়ের অফিসে ঠিকাদারসহ আমাদের সবাইকে ডেকেছিল। তখন বলা হয়েছিল তিন দিনের মধ্যে আবার কাজ ধরা হবে। কিন্তু তারপর থেকে এখনও কোনো কাজ শুরু হয়নি।"

সুতালড়ী ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুস সোবহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, গত রোজায় প্রথম কাজ শুরু হয়। কোরবানী ঈদের সময় ছাদ ঢালাই দেয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো কাজ হয়নি। আমার এই ভিটায় থাকার ঘরটি ভেঙে এই বিল্ডিংয়ের জায়গা দিয়েছি। এই ঘর কমপ্লিট না হওয়ায় আমাদের থাকার খুব অসুবিধে হচ্ছে। আমি অসুস্থ মানুষ। যেভাবে কাজ চলছে তাতে এই ঘর দেখে যেতে পারব কিনা সন্দেহ।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাফি ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আল রাফি জানান, "বিল পাইনা তাই কাজ করতে পারছি না। বিল পেলে কাজ শুরু করা হবে।"

মুঠোফোনে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, "এতো দিন বাজেট ছিল না। আমরা সঠিকভাবে টাকা পাইনি। এখন আমরা টাকা পাচ্ছি। আশা করি দুই আড়াই মাসের মধ্যে সকল বাসা কমপ্লিট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৪৩টির মধ্যে ৭টি ঘর কমপ্লিট হয়েছে। মূলত সমস্য ছিল এতোদিন ঠিকাদার বিল পাচ্ছিল না তাই কাজের গতি কম ছিল। আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছি, শোকজ করেছি। একাধিকবার মন্ত্রণালয়েও চাপ দেয়া হয়েছে। এখন কাজের গতি অনেকটা ভাল। আমরা বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, কোরবানি ঈদের মধ্যে সব বাসা কমপ্লিট হবে।"

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে