বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মৌলভীবাজার জেলা আহবায়ক কমিটি’র সদস্য, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বার বার নির্বাচিত সাবেক মেয়র মহসীন মিয়া মধু আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে চারটায় মৌলভীবাজার আদালত থেকে তিনি মুক্তি পান।
উল্লেখ্য গত রোববার (৩০ মার্চ) ঈদের আগের দিন দিবাগত রাতে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডস্থ গদার বাজার এলাকায় বিনা লাভের বাজার নামের দোকানের পাশে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা (টমটম) রাখাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত পৌনে ১১টার দিকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র, সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং ন্যাশনাল টি কোম্পানীর স্বতন্ত্র পরিচালক মো. মহসিন মিয়া মধু মালিকানাধিন অস্থায়ী বিনা লাভের বাজার পরিদর্শনে গিয়ে টমটম পার্কিং করে রাখাকে কেন্দ্র করে চালকের সাথে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়। এসময় সদর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য (মেম্বার) আনার মিয়া উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে টমটম চালকের পক্ষ নিয়ে কথা বললে বাকবিতন্ডা আরো তিব্র হয়। পরে মহসিন মিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বাসায় চলে যান। এক টমটম চালক জানান, আমি দেখেছি মেয়র গাড়ী থেকে নেমে দেখেন রাস্তার দুই পাশে যত্রতত্রভাবে টমটম দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখায় মানুষের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। তাই তিনি টমটম ড্রাইভারদের বলেছিলেন রাস্তা ছেড়ে পার্কিং করার জন্য কিন্তু হঠাৎ করে ঐ এলাকার সাবেক মেম্বার আনার মিয়া মেয়রের সাথে অযথা তর্কাতর্কি করতে থাকে আর বলে এটা টমটম স্টেন্ড।
বিষয়টি জানাজানি হলে উভয় পক্ষের সমর্থকরা জড়ো হয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। সংঘর্ষের সময় বিনা লাভের বাজার, কয়েকটি টমটম ও একটি প্রাইভেট কার ভাংচুর হয়। এসময় পথচারী ও ঈদের কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫৬ রাউন্ড শিষা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় শহরে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন বিভিন্ন মার্কেটে আটকা পড়েন। রাত আড়াইটার পর মৌলভীবাজার থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রীমঙ্গল এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে দোকানপাটে আটকে পড়া সাধারণ মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফেরেন।
রাত চারটার দিকে সেনাবাহিনী বাসভবন থেকে মহসিন মিয়া মধু, তাঁর ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, ছোট ভাই সেলিম মিয়া, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আলকাছ মিয়াসহ ১৩ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে। পাশাপাশি পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রাম থেকে সাবেক ইউপি সদস্য আনার মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম হৃদয়কে আটক করে থানায় সোপর্দ করে।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাইভেট কার ভাংচুরের অভিযোগ এনে আকলিমা নামে এক নারী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মহসিন মিয়ার সাথে আটক ১৩জনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
অন্যদিকে, এসআই অলক বিহারী গুণ বাদী হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আনার মিয়া ও তাঁর পুত্র কামরুল ইসলাম হৃদয়সহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে ২৮০-২৮৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামী সেনাবাহিনীর হাতে আটক আনার মিয়ার পুত্র কামরুল ইসলাম হৃদয়কে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা সূত্রে জানাযায়, গত ৩০মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের হবিগঞ্জ রোডস্থ গদার বাজার পয়েন্টে ‘বিনা লাভের বাজার’ নামের অস্থায়ী দোকানটিতে জেলা বিএনপির নেতা মহসিন মিয়া মধু তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়া পরিদর্শনে যান। এ সময় দোকানের পার্শ্বে টমটম পার্কিং নিয়ে মধু মিয়ার সাথে আনার মিয়ার বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরবর্তীতে অটোরিক্সা চালকেরা পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে মাইকিং করে এলাকার লোকজনদের জড়ো করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহসিন মিয়া মধুর পক্ষের লোকজনদের ওপর হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৩নং ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে ‘আমাদের খামার’ নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় উপস্থিত হয়ে অটোরিক্সা (টমটম) চালক পক্ষের লোকজনদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে উল্লেখিত আসামীগনসহ ২৮০/২৮৫ জন আসামি বেআইনী জনতাবদ্ধে মিলিত হয়ে হাতে লাঠি সোঠা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান এবং পুলিশের ওপর হামলা করে।
এসময় ওসি আমিনুল ইসলামের সরকারী পিকআপ গাড়ীর পেছনের লাইট ভাঙচুর করে ও ব্যাক ঢালা দা দিয়া কোপ দিয়ে ক্ষতি সাধন করে। এসময় লোহার রড, লাঠি সোঠা, ইট পাটকেল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে আহত হন এসআই বাবুল কুমার পাল, এএসআই মো. শরাফত আলী, কনস্টেবল ফয়েজ আহমদ, পাপলু দেবনাথ, ইখতিয়ার হোসেনসহ মামলার বাদী এসআই অলক বিহারী গুণ। একপর্যায়ে মামলার আসামীরা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনার দিকে আসতে থাকলে পুলিশ শহরের চৌমুহনা মোড়ে এসে অবস্থান নেন। মামলায় আরো বলা হয়, উল্লেখিত আসামীগনসহ ২৮০/২৮৫ আসামী চৌমুহনাস্থ হবিগঞ্জ রোডে মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং মহসিন মিয়া মধু’র পক্ষের লোকজন স্টেশন রোডে অবস্থান নিয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে জনসাধারনের জানমালের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ ২৬ রাউন্ড শিষা কার্তুজ ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ফাঁকা ফায়ার করে উভয় পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিনসহ সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। টমটম রাখা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিককে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অ্যাসল্ট মামলা ও সংঘর্ষের সময় প্রাইভেট কার ভাংচুরের অভিযোগে আকলিমা বেগম নামে এক নারী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুই মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৩২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ১৪ জনকে।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুকে গ্রেফতার করায় জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মহসিন মিয়া মধু’র গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানান। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু। খবর পেয়ে গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা নেতাকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান উনার বাস ভবনে।
যাযাদি/ এসএম