বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দুর্নীতিমুক্ত সেবা বাস্তবায়নে কাজ করছেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম

নারায়ণগঞ্জে ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স পেলেন ৯২ ঠিকাদার 

জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ প্রতিনিধি
  ২২ মে ২০২৫, ১৮:৩৮
নারায়ণগঞ্জে ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স পেলেন ৯২ ঠিকাদার 
ছবি: যায়যায়দিন

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে ৯২ জন ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে ঠিকাদারি লাইসেন্স। সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। নিজের সরাসরি উপস্থিতিতে এবং নিজ হাতে লাইসেন্স প্রদান করে তিনি এই উদ্যোগকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন।

এ ধরনের উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে প্রথম এবং জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতেও এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

1

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা জানান, এবারে তারা শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি ৫,৭৫০/- টাকা জমা দিয়েই লাইসেন্স হাতে পেয়েছেন। অতীতে ঠিকাদারি লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স পেতে অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মচারীদের।

মেসার্স আলী ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. আলী আজগর বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ৪০ বছরের ঠিকাদারি জীবনে এই প্রথম এক পয়সাও ঘুষ না দিয়ে আমি লাইসেন্স পেলাম। এটি একজন সৎ ও মানবিক জেলা প্রশাসকের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এমন দৃষ্টান্ত আগে কখনো দেখিনি।’

একই অভিমত ব্যক্ত করেন মেসার্স মুলতাযাম ট্রেডার্সের প্রোপাইটর মো. রহুল আমিন দিপু। তিনি বলেন, ‘আগে লাইসেন্স করতে গেলে অফিসে দালালদের পেছনে ঘুরতে হতো, দিতে হতো মোটা অংকের ঘুষ। আজ আমরা ৯২ জন ঠিকাদার জেলা প্রশাসকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঘুষ ছাড়া সরকারি লাইসেন্স পেয়েছি। এটি এক কথায় অবিশ্বাস্য। কিন্তু আজ বাস্তবে তা সম্ভব হয়েছে ’

লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা বলেন, সরাসরি জেলা প্রশাসকের হাত থেকে লাইসেন্স গ্রহণ তাদের জন্য গর্বের ও সম্মানের বিষয়। এতে শুধু অনিয়ম বন্ধই হয়নি, বরং তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও পেশাগত নিষ্ঠাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

একজন নবনিযুক্ত ঠিকাদার বলেন,‘জেলা প্রশাসকের মতো একজন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা থাকলে সরকারি সেবা সত্যিই জনবান্ধব হতে পারে। ঘুষ ছাড়া কাজ করতে পারলে আমরা সিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে পারবো। এতে জনগণ প্রকৃত সেবা পাবে, আর প্রকল্পগুলো হবে টেকসই।’

গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হোসনে আরা বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), জেলা পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা।

অনুষ্ঠান শেষে “গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ” কর্মসূচির আওতায় জেলা পরিষদ ভবনের সামনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকারি অর্থের কাজ জনগণের কল্যাণে যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, সেটি নিশ্চিত করাই আপনাদের প্রধান দায়িত্ব। কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে হবে। আজ যেভাবে ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স পেলেন, তেমনি আপনারাও যেন কোনো ঘুষ ছাড়াই কাজ পান—এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৎ থেকে ভালো কাজ করলে মানুষ আপনাদের কাজের কথা আজীবন মনে রাখবে। দুর্নীতিকে না বলুন, দায়িত্বকে হ্যাঁ বলুন।’

অনুষ্ঠান শেষে ঠিকাদাররা একত্রে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘জেলার অভিভাবক হিসেবে তিনি সত্যিকারের মানবিক ও সৎ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন ডিসি চাইলে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব।’

এই ধরনের স্বচ্ছ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত প্রশাসনিক উদ্যোগ শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, গোটা দেশের সরকারি সেবা ব্যবস্থার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে