রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজার সংলগ্ন ঐতিহাসিক খালটি আজ দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ মিটার প্রস্থের সর্পিল আকৃতির এ খালটি একসময় ছিল জীববৈচিত্র্য, জীবন-জীবিকার নির্ভরযোগ্য উৎস। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অভাব, অবৈধ দখল এবং বর্জ্য ফেলার কারণে আজ এটি মৃতপ্রায়।
এই খালটি উৎপত্তি লাভ করেছে পাহাড়ি এলাকার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন থেকে এবং প্রবাহিত হয়ে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি মতি পাড়ার মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিলেছে।
বর্জ্য ও দখলে নাকাল জনজীবন: বাঙ্গালহালিয়া বাজার ঘেঁষা এই খাল আজ পরিণত হয়েছে বর্জ্য ফেলার গর্তে। বাজার, ক্লিনিক, দোকান, এমনকি গ্রাম থেকে আনা বর্জ্যও অবলীলায় ফেলা হচ্ছে খালের মধ্যে।
এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পানির মান এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, মাছ তো দূরের কথা, জলজ জীবনের অস্তিত্বও বিলীন হওয়ার পথে।অবৈধ বালু উত্তোলন ও স্থাপনা নির্মাণ: খালটির বিভিন্ন অংশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিনিয়ত তোলা হচ্ছে বালু। এতে খালের গভীরতা ও তীরবর্তী জমির স্থায়িত্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয়দের স্মৃতিতে খালের জৌলুস: ৭০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা সানুচিং জানালেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় এই খালে স্রোত থাকত, মাছ থাকত, মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন আর সে দৃশ্য নেই।’
চাপ বাড়ছে প্রশাসনের ওপর: পরিবেশবাদী, স্থানীয় মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলোর দাবি, খালটিকে রক্ষা করতে অবিলম্বে ড্রেজিং করতে হবে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে এবং বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক আন্দোলনেরও ডাক উঠেছে।
৩২০ নং কাকড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চাথোয়াইমং মারমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কিছু লোক খালের ভিতরে ঘর তুলে দখল করে আছে। আবার অনেকে অবাধে বালু তুলে পরিবেশ ধ্বংস করছে। বর্ষাকালে এর প্রভাবে বাজার ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’
যে খাল একসময় প্রাণের আধার ছিল, আজ তা দখল-দূষণে নিঃশেষ হওয়ার পথে। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালহালিয়ার খাল কেবল ইতিহাস হয়ে থাকবে। সরকার, প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে এই খালকে ফিরিয়ে আনতে তার প্রকৃত রূপে।