শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠক মত

নতুনধারা
  ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

নতুন প্রজন্মকে জানতে

দিন বীরাঙ্গনার ইতিহাস

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পকিস্তানি হানাদাররা বাঙালি নারীদের ওপর চালিয়েছিল শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন। সেই নিযার্তনের ক্ষত শুকায়নি এখনো। এখনো অনেক নারী এই ক্ষত বহন করে বেড়ান। হানাদাররা যে অমানবিক পাশবিক নিযার্তন করছে সেটি পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নিমর্ম অত্যাচারের চিত্র পাওয়া দুষ্কর। এমনই নিযার্তন করা হয়েছিল আমার মা, বোনদের ওপর। বাংলাদেশের এমন কোনো এলাকা নেই, যে এলাকায় মেয়েদের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের চিত্র পাওয়া যাবে না। হিন্দু, মুসলিম, বিবাহিত অথবা অবিবাহিত, বাঙালি আদিবাসী সব ধরনের বাঙালি নারীরাই মানবরূপী এই দানবদের লালসার শিকার হয়েছিলেন। তাদের এই লালসার ফল হিসেবে আমার মা-বোনরা অনেকেই গভর্সঞ্চারিত হয়েছিল। তারা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। এই সন্তানদের আমরা বলে থাকি যুদ্ধশিশু। আর নিযাির্তত নারীদের বলে থাকি ‘বীরাঙ্গনা’।

বীরাঙ্গনা কোনো নেতিবাচক শব্দ নয়। এর অথর্ বীর নারী। যে নারী বীরত্বের কাজ করে তাদের এই নাম দেয়া হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে মুক্তিযুদ্ধে নিযার্তনের শিকার এই নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধী দিয়েছেন। তাদের গবির্ত করেছেন, করেছেন সম্মানিত। তাদের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু বীরঙ্গনাদের জীবনের গল্প আমরা ইতিহাসে কতটুকু স্থান দিতে পেরেছি। যদি ইতিহাসে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্থান যথাথর্ভাবে না দেয়া হয় তাহলে নতুন প্রন্মের যারা তারা জানবে কী করে সত্যিকার কাহিনী। কী ঘটেছিল তাদের সঙ্গে? এটা লজ্জার কোনো বিষয় নয়। একটি দেশ অন্যায় আর শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লড়াই করেছিল। সেই লড়াইটা বীরাঙ্গনারাও করেছিলেন। তারাও যোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন রণাঙ্গনে লড়াই করেছেন। তারা করেছেন শারীরিকভাবে। নিমর্মভাবে তাদের ওপর চড়াও হয়েছিল হায়নারা। তারা যে কী ধরনের অত্যাচার করেছিল সেটাই জানানো দরকার তরুণ প্রজন্মকে। যদি সত্যিই প্রগতিশীলতার চিন্তা-চেতনার অধিকারী করে নতুন প্রজন্মকে তৈরি করতে চান। যদি দেশের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ জাগাতে চান তাহলে সত্যিকার ঘটনাটাই উপস্থাপন করতে হবে তাদের কাছে। না হলে জানোয়ারদের প্রতি ঘৃণা জন্মাবে কেমন করে?

ছোট একটা উদাহরণ দিচ্ছি- গত সত্তর বছরে জামাির্নতে নাৎসিদের অত্যাচারের সুশৃঙ্খল প্রামাণ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সে দেশে। তার ওপর নিভর্র করে সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নিমার্ণ করা হয়েছে। ইতিহাস লেখা হয়েছে। কোনো প্রজন্মকে ভুলতে দেয়া হয়নি নাজি বা ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারের কথা। যে কারণে পাশ্চাত্যে নাজি বা ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়নি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর নিযার্তনের ইতিহাস অনেকটাই অজানা। নারীরা অত্মসম্মানের ভয়ে এটা বলতে চাননি। অথবা ইতিহাসবিদরা ও গবেষকরা এই বিষয়ে বেশি একটা কাজ করেননি। তবে এটার ওপর সরকারিভাবে প্রচুর কাজ করা উচিত। বেশিদিন হয়নি আমাদের মধ্য থেকে গত হয়েছে বীরাঙ্গনা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। একজন সাহসী বীরাঙ্গনা। যিনি নিজে বুক ফুলিয়ে এসব বলেছেন। অন্য নারীদেরও তা প্রকাশ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সাহস জুগিয়েছিলেন নিযার্তনের শিকার নারীদের। অগ্রপ্রতীক ছিলেন তাদের। আমাদের বীরাঙ্গনাদের। তিনি নিজে রক্ষণশীলতাকে ভেঙে প্রাপ্য সম্মান অজের্ন সোচ্চার ছিলেন। স্বাধীনতা-পরবতীর্ ইতিহাস পড়লে বুঝা যায়, আমাদের সমাজকে বীরাঙ্গনারা কত অবহেলিত ছিলেন। যদিও ইতিহাস বেশি একটা নাই। হয়তো বীরাঙ্গনাদের কোনো পরিবার মেনে নিয়েছে। কিন্তু তখনই সমাজ মেনে নেয়নি। আবার সমাজ মেনে নিলে পরিবার মেনে নেয়নি। ফলে পরিবার এবং সমাজ থেকে আমাদের বীরাঙ্গনাদের রাস্তায় রাস্তা ঘুরেছেন। তার খবর কি আমরা রেখেছি। তাদের বীরাঙ্গনা হওয়ার পেছনে যে কত নিমর্ম গল্প রয়েছে। সেটা কি একবার চিন্তা করে দেখেছি। এই বিরাঙ্গনারাই পরিবার অথবা সমাজে নিহত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। আমরা চাই দেশবাসী সত্য ঘটনাটাই জানুক। কেমন শারীরিক ও পাশবিক নিযার্তনের মধ্য দিয়ে তাদের সময় অতিবাহিত করেছেন। এই সত্যটা জানলেই মনে হয় আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারব। আমাদের মা বোনরা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন শুধু একটি স্বাধীন দেশের জন্য। বাংলা ভাষার জন্য। ওরা তো ইচ্ছা করে হানাদারদের সঙ্গে এমন কাজ করেনি। তাদের করতে বাধ্য করা হয়েছে। বীরাঙ্গনাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মান দিয়েছিলেন। আমরাও জাতির জনককে অনুসরণ করে বীরাঙ্গনাদেরকে এখন মা বলে ডাকি। তবে একটি কথা বলব বীরাঙ্গনাদের তখনই সত্যিকার সম্মান করা হবে যদি তাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাদের সত্যিকার ইতিহাসটা তরুণ প্রজন্মকে জানানো হয়। তখন প্রজন্ম জানতে পারবে একটি দেশ সৃষ্টি হওয়ার পেছনের সত্যিকার কাহিনী।

শতাব্দী জুবায়ের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন

কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন বা বিক্ষোভ।

কোটা সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষাথীর্রা মিলে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কমর্সূচি পালন করে আসছে শাহবাগে। বতর্মানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রাথীর্ না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটা বেশি থাকার কারণে অনেক মেধাবীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা তাদের মেধা দিয়ে সোনার হরিণ নামে চাকরিটা এতো সহজেই ধরতে পারছে না। সেই সকল চাকরি প্রত্যাশীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। সেই আন্দোলনটি সমগ্র বাংলাদেশের সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ‘তখন বাংলাদেশের সুযোগ্য, গণতন্ত্রীর মানসকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাথীের্দর দাবি মেনে নিয়ে, ১১ এপ্রিল মহান জাতীয় সংসদে সব কোটা বাতিলের ঘোষণা করেন। ‘শিক্ষাথীের্দর তখন টানা আন্দোলন ও অবস্থান কমর্সূচির স্থগিত রাখেন। কিন্তু এখন পযর্ন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয় নাই। আবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা চাইলো কোটা সংস্কার, হইলো কোটা বাতিলের ঘোষণা। তাই এই কোটা নিয়ে সরকার ইতিমধ্যে ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই বাংলার ষোল কোটি মানুষের আশা ও প্রত্যাশা।

মাহফুজুর রহমান খান

চিনিতোলা, মেলান্দহ, জামালপুর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<4087 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1