শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

লিটন হত্যা: অস্ত্র মামলায় কাদের খানের যাবজ্জীবন

২০১৬ সালে নিজ বাড়ি সুন্দরগঞ্জের সাহাবাজ গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ হত্যার ঘটনায় কাদের খানকে আসামি করে অস্ত্র মামলাও দায়ের করে পুলিশ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
  ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০
লিটন হত্যা: অস্ত্র মামলায় কাদের খানের যাবজ্জীবন
আবদুল কাদের খান

গাইবান্ধা-১ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় একই আসনের জাপার সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলা দায়ের হওয়ার ৩ বছর চার মাস বিচারকার্য চলার পর মঙ্গলবার জুন সাড়ে ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এ রায় ঘোষণা করেন। সকাল ১১টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৪৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান বিচারক। রায় ঘোষণার সময় আসামি আবদুল কাদের খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা কারাগার থেকে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে কাদের খানকে আদালতে আনে পুলিশ।

দন্ডিত আসামি আবদুল কাদের খান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি গ্রামের মৃত নয়ান খাঁনের ছেলে। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাদের খান। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে কাদের খান গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আছেন। সম্প্রতি সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে কাদের খান ও তার স্ত্রী ডা. আখতার জাহান উম্মে নাসিমা বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের ছাপরহাটির গ্রামের বাড়ির উঠানের মাটির নিচ থেকে একটি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৫ ফেব্রম্নয়ারি কাদের খানের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে (অস্ত্র আইনে) সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষ ৩৯ দিন পর ৫ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা কাদের খানকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ ৩ বছর প্রায় চার মাস মামলার বিচারকার্য চলে আদালতে।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসলি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, গত ৩০ মে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক, শুনানিসহ সব কার্যক্রম শেষে ১১ জুন রায়ের দিন ধার্য করেন আদালতের বিচারক। সেই মোতাবেক আদালতের বিচারক শুনানি শেষে আসামি আবদুল কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। আসামি কাদের খানের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায় ঘোষণার পর পরেই কাদের খানকে পুলিশ পাহারায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের দেয়া রায়ের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, রায়ের সময় আদালতে

লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তিনিও আবেগ আপস্নুত হয়ে পড়েন। এ সময় রায়ের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তবে লিটন হত্যা মামলার বিচার কার্য দ্রম্নত শেষ করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়ি সুন্দরগঞ্জের সাহাবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। হত্যার ঘটনায় ১ জানুয়ারি লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলি বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া হত্যার কাজে ব্যবহৃত গুলিভর্তি পিস্তল উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র মামলায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে পুলিশ। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কাদের খানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় ৩টি অস্ত্র ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ১০ রাউন্ড গুলিসহ একটি অস্ত্র কাদের খান লোক মাধ্যমে সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় অস্ত্রটি আব্দুল কাদের খানের গ্রামের বাড়ি ছাপরহাটি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক তৃতীয় অস্ত্রটিসহ ৪০ রাউন্ড গুলির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। তিনটি অস্ত্রের মধ্যে কাদের খানের লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র ছিল একটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে