মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে বাচ্চু ও রবিউল সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে বাজিমাত 

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৩:৫৮
ছবি-যাযাদি

চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভায় ১বিঘা জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে রীতিমতো বাজিমাত করে ফেলেছেন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মৃত ডা.সালেহ জহুরের ছেলে সৌখিন কৃষক দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাচ্চু (৪৫) ও মো.রবিউল হোসেন (৩৮)

শখের বশে অনুপ্রাণিত হয়ে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করে কৃষি অফিসসহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা।

সূর্যমুখী বাগানে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। দেখলেই দু'চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ পাতার ভেতর থেকে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিতে নিজের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। সামান্য বাতাসেই দুল খাচ্ছে ফুলগলো। ফুলের সাথে সূর্যের সাথে যেন মিতালী হয়েছে। সূর্যমুখীর হাসিতে নজর কেড়েছে ফুল প্রেমীদের।

দিগন্ত জুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হলুদ হাসি দু'চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এ ফুল দেখতে আর সূর্যমুখী বাগানে নিজেদের ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছেন।

উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসার আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে ১বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন সাখাওয়াত হোসেন ও রবিউল হোসেন। বাজারে সূর্যমুখী বীজের ভালো দাম আছে। আশা করছেন তারা লাভবান হবেন।

পথচারীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, ফুল ও প্রকৃতি প্রেমীগণ সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসছেন।

শনিবার (১৮ মার্চ) সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রকৃতির মাঝে নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। সবুজ গাছে ফুটে আছে শত শত সূর্যমুখী ফুল। প্রতিনিয়ত মিষ্টি হলুদ রঙের সূর্যমুখী দেখতে সকাল-বিকেল ভিড় করছেন দর্শনার্থী। মিষ্টি হলুদ রঙের সূর্যমুখীতে সেজেছে প্রকৃতি।

সূর্যমূখী বাগানের মালিক সাখাওয়াত ও রবিউল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় ১বিঘা জমিতে প্রথমবারের মত সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে চমৎকার। প্রতিটি গাছে ফুল এসেছে। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অপরদিকে এ ফুলের বীজ বেঁচেও লাভবান হওয়া যায়। সে চিন্তা মাথায় রেখে এ বাগান করেছেন। আমাদের এ সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন সূর্যমুখী চাষ করার।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে।

ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ এ তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেল মানবদেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এক মণ বীজে প্রায় ১৮ কেজি তেল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়।

ফটিকছড়ি উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফটিকছড়িতে সূর্যমুখী ফুল চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে- তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আগামীতে সূর্যমুখী চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষক সাখাওত হোসে ও রবিউল হোসেনসহ অনেক কৃষকের মাঝে সরকারিভাবে বীজ, সার দেওয়া হয়েছে।

সূর্যমুখী ফুল চাষে দেশে তেল উৎপাদনে ভালো ভূমিকা রাখবে। আশা করছি, এর বাম্পার ফলন হবে। কৃষি অফিস কৃষকদের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে