ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইতে ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে আবার নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক মাস ধরে চলা দরপতনের সঙ্গে এখন শেয়ারবাজারে লেনদেন খরাও প্রকোট হয়ে উঠছে।
বর্তমান সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২২ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্ট হয়। তিন দিনের মাথায় সেই রেকর্ড ভেঙে এখন সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রোববার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম ডিএসইতে আড়াই’শ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
এই লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকও তলানীতে নেমেছে। ২০১৯ সালের শেষদিকে করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। করোনার প্রভাবে জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে।
করোনার সময় দেশের শেয়ারবাজারে যেমন ভয়াবহ দরপতন দেখা গিয়েছিল, এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৯ আগস্টের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক এখন সর্বনিম্ন অবস্থানে। অন্যভাবে বলা যায় করোনা মহামারির সময়ে ফিরে গেছে মূল্যসূচক।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি অন্য দুই সূচকেরও পতন হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৪৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস মূল্য সূচক কমলো।
এদিকে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৫টির। আর ৮১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২৮টির দাম কমেছে এবং ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৩৮টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৯টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০টির দাম কমেছে এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেনে হয়েছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার। কোম্পানিটির ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার। ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকে।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বারাকা পাওয়ার, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।