রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমার নেপথ্যে যেসব কারণ জানাল পরিকল্পনা কমিশন

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৫ মে ২০২৫, ১৮:২০
এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমার নেপথ্যে যেসব কারণ জানাল পরিকল্পনা কমিশন
ছবি: সংগৃহীত

কঠোর মুদ্রানীতি ও লক্ষ্যভিত্তিক রাজস্ব হস্তক্ষেপের সম্মিলিত প্রভাবে— এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ২৪ মে প্রকাশিত 'ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক: মে ২০২৫' শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থের সরবরাহ ও চাহিদা উভয় দিক থেকেই গৃহীত পদক্ষেপ— মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে। চাহিদা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি মুদ্রানীতি—যা অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর দ্বিতীয়ার্ধে কার্যকর হয়—মূল্যস্ফীতি রোধ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে।

1

একইসঙ্গে, চাল ও ভোজ্যতেলের মতো জরুরি খাদ্যপণ্যের আমদানিতে শুল্ক হ্রাসসহ রাজস্ব পদক্ষেপ— ভোক্তাদের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করেছে। সরবরাহের দিক থেকে, অনুকূল আবহাওয়া এবং বন্যার অনুপস্থিতির ফলে মৌসুমি শাকসবজি ও ফসলের সরবরাহ নির্বিঘ্ন হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলো ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭–৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।"

২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে খাদ্য ও সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮.৯৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৮.৬৩ শতাংশে। একই সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৩৫ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়ায় ৯.১৭ শতাংশে।

এপ্রিল মাসেও খাদ্য খাতই ছিল মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় উৎস, যদিও এর প্রভাব কিছুটা কমেছে। এ খাত মূল্যস্ফীতির ৪২.২ শতাংশের জন্য দায়ী। খাদ্য বহির্ভুত খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ন ও ইউটিলিটি (১৩ শতাংশ), পোশাক ও জুতা (৯.৮ শতাংশ), এবং পরিবহন (৭ শতাংশ) মূল্যস্ফীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

প্রতিবেদনে খাদ্যপণ্যের ভেতরেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। যেমন মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান মার্চে ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে এপ্রিল মাসে ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সরবরাহ ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এরমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে মাঝারি চালেরই অবদান ১৯.৪ শতাংশ।

মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে বেগুনের বাড়তি দরও, যা ১৭.১২ শতাংশ অবদান রাখে। তবে এপ্রিল মাসে ১১ শতাংশ হয়ে তা তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। সয়াবিন তেল-ও মূল্যস্ফীতির পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে (৮.২ শতাংশ), আর আলুর দাম কমে যাওয়ায় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে (–১৩.৬ শতাংশ)।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির প্রভাব (৪৪.৭ শতাংশ) শহরাঞ্চলের তুলনায় (৩৬.৫ শতাংশ) অনেক বেশি।

নীতিগত পরিবর্তনের সুপারিশ

ধারাবাহিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে জিইডি শুধুমাত্র মুদ্রানীতিতে নির্ভর না করে— সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সরকারি খাদ্য মজুত জোরদার ও লক্ষ্যভিত্তিক খাদ্য হস্তান্তর কর্মসূচি চালুর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের ভর্তুকি প্রদানে সীমিত আর্থিক সক্ষমতা স্বীকার করে জিইডি পরামর্শ দিয়েছে—বিদ্যালয়ভিত্তিক খাবার বিতরণ, খাদ্যের বিনিময়ে কর্মসূচি, ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) এবং নিশ্চিত কর্মসংস্থান কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা উচিত, বিশেষ করে চাষের অফ-সিজনে।

এ ছাড়া, শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা গ্রামীণ পরিবারের মতো খাদ্য মজুত করে রাখতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে