ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকার বেশি। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে মোট ৫১৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি।
এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪২৭ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার পণ্য এবং আমদানি হয়েছিল ৭ কোটি টাকার পণ্য। সে বছর রাজস্ব আদায় ছিল ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
তবে গত মে মাসে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে নতুন অর্থবছরে রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লাগবে বলেও মনে করছেন তারা।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে হিমায়িত মাছ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্লাস্টিক আসবাবপত্র, সিমেন্ট ও পিভিসি সামগ্রী। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৩১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকার জিরা, ডাল ও কাজুবাদাম। এসব আমদানি থেকে রাজস্ব এসেছে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, মে মাসে ভারত সরকার ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফলের স্বাদযুক্ত জুস, তুলা, প্লাস্টিক, পিভিসি সামগ্রী ও কাঠের ফার্নিচার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের ফার্নিচার ছাড়া বাকি সব পণ্যই নিয়মিত রপ্তানি হতো আখাউড়া বন্দর দিয়ে।
আমদানি-রপ্তানিকারক শাহনেওয়াজ শানু বলেন, 'যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি আছে, তার অধিকাংশেরই আমাদের অঞ্চলে চাহিদা নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি—সব ধরনের পণ্যের আমদানির অনুমতি দেয়া হোক। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, পাশাপাশি বন্দরের কার্যক্রমও চাঙা হবে।'
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নেসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'নানা কারণে দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে রপ্তানি বাণিজ্য। আমরা নতুন পণ্যের বাজার খুঁজছি, তবে নিষেধাজ্ঞায় থাকা পণ্যগুলোর চাহিদা ছিল বেশি। সরকার যেন দ্রুত ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেয়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'
এ বিষয়ে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার রীমা আক্তার বলেন, 'ব্যবসায়ীদের সবসময় রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহিত করি এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিই। যেহেতু কিছু পণ্যে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই নতুন পণ্যের বাজার খোঁজার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে সব পণ্যের আমদানির অনুমোদনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।'
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে। রপ্তানি বাণিজ্য বেশি হওয়ায় এই বন্দরের পরিচিতি 'রপ্তানিমুখী' বন্দর হিসেবে। গেল বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কিছু সময় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে রাজস্ব আয় কমে গেছে আমদানির পরিমাণ অনিয়মিত থাকায়।