শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

জাবির হলে বহিরাগত যুবকসহ ছাত্রী আটক

জাবি প্রতিনিধি
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৩
আপডেট  : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫১
জাবির হলে বহিরাগত যুবকসহ ছাত্রী আটক
ছবি-যায়যায়দিন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মেয়েদের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের তিন তলার একটি কক্ষে বহিরাগত এক যুবকসহ নারী শিক্ষার্থীকে আটক করেছে হল প্রশাসন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১০ টার দিকে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের তিনতলার একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃতদের মধ্যে যুবককে আশুলিয়া থানা পুলিশে এবং নারী শিক্ষার্থীকে তার স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আটককৃত যুবকের নাম আশরাফুল আলম পারভেজ। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ডাবলমুরিং থানার মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় তার বাড়ি। তবে বর্তমানে তিনি গাজিপুরে থাকেন বলে জানান। আটককৃত নারী শিক্ষার্থীর নাম অর্পা খন্দকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ ব্যাচ) এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

হল কর্তৃপক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীর সাথে কপালে টিপ, প্লাজু ও মুখে ঘোমটা দিয়ে প্রবেশ করে। এসময় কয়েকজন পোশাক ও হাটা দেখে আশেপাশের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সন্দেহ হয়। পরে তারা হল সুপারকে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বলেন। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে হল সুপারসহ ওই নারী শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে অভিযুক্ত পারভেজ সহ একসাথে দেখতে পান তারা। এরপর পারভেজকে আটক করে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পুলিশে দেওয়া হয়।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আটক পারভেজকে শারী ও টিপ পরিয়ে দেয় হলের ক্ষুব্ধ আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

আটকের পর ঘটনা স্বীকার পারভেজ বলেন,"আমরা দুইজন ভালো দোস্ত। সাত বছরের বন্ধুত্ব। দুজনেই লালন ভক্ত। তাকে আমি বিয়ে দিয়েছি। আমি হিম উৎসবে বেড়াতে এসেছি। হলে আসার সময় আমি কপালে টিপ পড়ে মুখ ও শরীর চাদরে মুড়িয়ে হলে প্রবেশ করি।

তবে অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা উভয়েই ভালো বন্ধু। হিম উৎসবে সে এসেছিল। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় তাকে হলে নিয়ে এসেছি। আমরা কেউ আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম না।

অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীর স্বামীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি পারভেজকে চেনেন না বলে জানান। পরে পারভেজকে ওই নারী শিক্ষার্থী শুধু ফেসবুক বন্ধু বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে অভিযুক্ত ঐ নারী শিক্ষার্থীর পক্ষে সাফাই গাইতে এলে হলের ছাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ক্যামেলিয়া চূড়া।এসময় তাকে ধাক্কা দিয়ে হলের সামনে থেকে চলে যেতে বলেন শিক্ষার্থীরা।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহনাজ পারভীন শানু বলেন, "ছেলেটা ক্যাম্পাসে চলমান হিম উৎসব থেকে ঐ মেয়ে বন্ধুর সাথে হলগেট পর্যন্ত আসে। এরপর ছেলেটা তার সম্পুর্ন শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে কপালে টিপ পরে হলের ভেতরে প্রবেশ করে। ছেলেটার পরনে পাজামা ও মাথায় লম্বা চুল ছিল। পরে আমরা ঐছেলেটাকে মেয়েদের ওয়াশরুমে দেখতে পাই। এরপর আমরা তাকে শনাক্ত করি এবং হল প্রশাসনকে জানাই।"

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের হল সুপার নাদিয়া সুলতানা বলেন, "হলের মেয়েরা ওই ছাত্রীর রুমে সেই পুরুষের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আমাকে জানালে তৎক্ষনাৎ আমি হলের খালাকে সাথে নিয়ে রুমে যাই। দরজা খোলার পর আমি তাকে খাটের উপরে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। তৎক্ষনাৎ আমি হল প্রভোস্টকে জানাই।"

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়েছি। অভিযুক্তদের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, হল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টরিয়াল টিমকে পাঠাই। এরপর আটক ছেলেকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হল অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।"

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে