রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও শাস্তির বিধান সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন হওয়ার পর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেরোবি ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা কর্মীরা।
গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার ড. হারুন অর রশিদের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসরণে, ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কেউ বিভিন্ন ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টা করলে এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক করণীয়/শান্তি নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল (পত্র নং-বেরোবি/রেজিঃ/সিন্ডিঃসিদ্ধঃ/১০৫/২০২৫ /৭১৮: তাং ২০-০২-২০২৫)।
গঠিত কমিটি কর্তৃক প্রণয়নকৃত বিধিমালা যাহা গত ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১১১তম সভায় অনুমোদিত হয়।
এই প্রণয়নকৃত বিধিমালাটি পরবর্তীতে 'পরীক্ষায় অসদুপায় ও শৃঙ্খলা বিধিমালা'য় সংযুক্ত হবে বলেও অফিস আদেশে বলা হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
তাদের অভিযোগ, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও তার শাস্তির বিধানের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণতন্ত্র চর্চার অধিকার হরণ করেছে। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকলে ছাত্রদের অধিকার, ন্যায্য দাবি এবং সমাজ পরিবর্তনের ইতিবাচক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে বলে দাবি তাদের।
বেরোবি শাখা ছাত্রদল নেতা ইয়ামিন বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, অপরাজনীতি বন্ধ হোক দেশের প্রতিটি সংকটে, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রসমাজই ছিল অগ্রভাগে। তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশ বহু বিজয় অর্জন করেছে। এ কারণেই ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আজ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার এবং শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে করা। এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বিশেষ মহল কাজ করছে, যারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেতৃত্বশূন্য ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চায়। ফলে ক্যাম্পাসে গোপনে একটি নোংরা ও স্বৈরাচারী রাজনীতি চর্চা করছে তারা, যা গণতান্ত্রিক চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বেরোবি শিবির কর্মী আহমাদুল হক আলবির বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সবারই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় আমরা নিন্দা জানাই। প্রশাসন এখানে হলের সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ইত্যাদির জন্য জিরো টলারেন্স দিতে পারত। কিন্তু সরাসরি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমরা নই।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিপ্লবী ধারায় উজ্জীবিত এক অনন্য ক্যাম্পাস। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য আগামী ২ মাসের মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাই।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বেরোবি শিবির অবস্থান জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আমরা সমর্থন করি না। এর নিন্দা জানাই। যদিও শিবির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি করে না, কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে না। তারপরও ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সাথে বসব।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন ইসলাম বলেন, দেশের প্রতিটি সংকটে ছাত্ররাই লড়াই সংগ্রাম করে বিজয় এনেছে। এ কারণেই ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আমি মনে করি ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রেসক্রিপশনে করা। তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই একটি মহল এই সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করছে। ক্যাম্পাসে গোপনে একটি মহলের নোংরা রাজনীতি চলছে। তাই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ছাত্রদল তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।