শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২৫, ২০:০২
আপডেট  : ১৭ মে ২০২৫, ২০:০৭
মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সরকারি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের দাবি জানিয়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।

একইসঙ্গে ১৬ জুনের মধ্যে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তা না হলে শিক্ষা ও আইন মন্ত্রণালয়ের মত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

1

শনিবার বিকালে ইডেন মহিলা কলেজের গেইটের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দুটি দাবিসহ মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সদস্য ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিমুল আবিদ ও বেগম বদরুন্নেছা সরকারি কলেজের জাফরিন আক্তার।

জাফরিন আক্তার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজের মুক্তির পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশিন-ইউজিসি এ কলেজগুলো পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে, যে প্রশাসন অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করবে। তবে আড়াই মাস পার হলেও এখনো সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা শুনে এসেছি, এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।

“ইতোমধ্যে ইউজিসি ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি) নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও মডেল প্রস্তুত আছে।”

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে জাফরিন বলেন, “সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, ওই কমিটিকে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি।”

শুরু থেকে একটি শ্রেণির সাত কলেজকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের সবকিছুতেই যেন ইচ্ছাকৃতভাবে ঢিলেমি দেওয়া হচ্ছে।”

জাফরিনের ভাষ্য, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন দেওয়ার কথা থাকলেও তা কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখনো ঝুলে আছে।”

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষাসহ সবকিছুতেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে তুলে ধরেন বদরুন্নেছো কলেজের এই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটা একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিমুল আবিদ। দাবিগুলো হলো-

>> রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

>> অন্তর্বর্তী প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে ভুতুড়ে ফলের সমাধান, বিভিন্ন বিষয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসঙ্গতি স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

>> অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

>> আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা, লোগো ও মনোগ্রাম প্রকাশ করতে হবে।

>> আগামী এক মাসের অর্থাৎ আগামী ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

তানজিমুল আবিদ বলেন, “১৮ মে (রোববার) যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি না হয় তাহলে পরদিন থেকে আমরা আবারও রাজপথে আন্দোলন শুরু করবো।”

পরবর্তী সময় কর্মসূচি কী হবে সেটা পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে একইসঙ্গে অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে তারা নজর রাখবেন বলেছেন এই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, “আমাদের যদি আবার মাঠে নামতে হয়, আমরা জনদুর্ভোগ এড়াতে এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে বাধ্য হব।”

পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ চলতি সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন ঘোষণা করা হবে বলে আশ্বস্ত করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তানজিমুল আবিদ।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ও বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাদের বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এরপর সেটি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টার এই আশ্বাসে তারা ভরসা রাখতে চান।

ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজ হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।

২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজগুলোকে গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত ১৬ মার্চ কলেজগুলোকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ঘোষণা আসে।

কলেজগুলোর অধিভুক্তি থেকে বাতিলের ঘোষণার মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন চলছিল। কিন্তু সেই ঘোষণায় ভর্তি কার্যক্রম থেমে যায়।

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করছে ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগে কলেজগুলোর দায়িত্ব নিতে একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রস্তাবও করে ইউজিসি।

বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দায়িত্ব আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিলেও নতুন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। ইউজিসির পাঠানো ওই প্রস্তাবনা গত ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা হয়নি।

ইউজিসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সাময়িক একটি সমন্বিত কাঠামো থাকবে যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে।

ইউজিসি যে কাঠামোর প্রস্তাব করেছে সে অনুযায়ী, ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাত কলেজের নজরদারি সংস্থা হিসাবে কাজ করবে। কাঠামোটির পরিচালক হবেন নজরদারি সংস্থা মনোনীত সাত কলেজের মধ্য থেকে একজন ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ অধ্যক্ষ।

প্রস্তাবিত কাঠামোতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়তা করবেন। একইভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে ওই কাঠামোকে সহায়তা করবেন। আর অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবেন। আর সাত কলেজের জন্য অনলাইন ভর্তি কমিটি থাকবে।

কাঠামোর কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো উপযুক্ত কার্যালয় (যে কলেজ থেকে পরিচালক মনোনীত হবেন) থেকে পরিচালিত হবে; এই কাঠামোর অধীনে সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগ প্রস্তাবিত কাঠামোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে। নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমে অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে