বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো স্বপ্ন দেখি- স্বপ্ন দেখতে তো বাধা নেই : ফাহমিদা নবী

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২১
এখনো স্বপ্ন দেখি- স্বপ্ন দেখতে তো বাধা নেই : ফাহমিদা নবী

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী- দেশের স্বনামধন্য সঙ্গীত পরিবারের শিল্পী। পিতা কিংবদন্তি সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মাহমুদুন্নবী। সঙ্গীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী ছোট বোন। একবার সুমধুর কণ্ঠ আর অনিন্দ্য গায়কী দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সুরকার ও উপস্থাপক হিসেবেও প্রশংসিত। এ শিল্পীর চলমান ব্যস্ততাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন মাতিয়ার রাফায়েল

নতুন কী গান আনলেন এরমধ্যে? আমি তো যখন তখন গান করি না। গানের কথা ও সুর সবকিছু দেখে-শুনে-বুঝে একটু রয়ে-সয়েই গান করি। সম্প্রতি নতুন একটা গান করেছি। গানের নাম ‘বন্ধু হারিয়ে গেলো’। এ গানের গীতিকার আনিসুজ্জামান জুয়েল। সুর ও সঙ্গীত করেছেন বর্ণ চক্রবর্তী। কিন্তু বর্ণ চক্রবর্তী অকালেই চলে গেছেন। তার চলে যাওয়ার কারণে গান প্রকাশেও দেরি হয়েছে। এরপর আমেরিকায় গিয়ে আরেকটি মিউজিক ভিডিও শুট করি। সেখানকার কলোরাডোর রেড রকস বা লাল পাহাড়ে গানটি প্রকাশ করি। এর আগে রঙ্গন মিউজিকের ব্যানারে প্রকাশ হয় ‘স্মৃতির দরজায়’ নামের একটি গান এবং আরেকটি ‘একটু আগে মন হারালো’ নামের একটি গান। গানটি একটা ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে।

এখন নিজেও গানে সুর দেন- সুরকার হিসেবে কতটা জনপ্রিয় হওয়া যায়?

আসলে আমি জনপ্রিয়তায় বিশ্বাসী নই। জনপ্রিয়তার জন্য গান করি না। আমি সুর করতে ভালোবাসি তাই সুর করি। আসলে আমি আব্বার সময়ে দেখেছি, আগে যারা গানের শিল্পী ছিলেন তারাও জনপ্রিয়তার জন্য গান করতেন না। তারা গান গাইতে ভালোবাসতেন তাই গাইতেন। জনপ্রিয়তার বিষয়টি এসেছে এখনকার শিল্পীদের মধ্যে। যারা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য কাজ করে। কিন্তু সবাই তো শিল্পী হতে পারে না। আমি আসলে জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো চিন্তা করি না। আমি সুর করতে ভালোবাসি।

শিল্পী হিসেবে নিজের মনে কোনো স্বপ্ন লালন করেন! এটা ঠিক যে, জনপ্রিয়তার জন্য আমি কাজ না করলেও আমার মনের মধ্যে একটি সুপ্ত স্বপ্ন আছে- সেটা বলতে পারেন। আমার একটা শখ যদি একটা ছবিতে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতে পারতাম। তবে এজন্য দুয়ারে-দুয়ারে ঘুরতে রাজি নই। কেউ যদি মনে করেন আমাকে দিয়ে কাজ করাবে তাহলেই কাজটি হবে নয়ত হবে না। জানি না, এ স্বপ্নটি আমার পূরণ হবে কিনা। তবে স্বপ্ন দেখি; স্বপ্ন দেখতে তো বাধা নেই।

যদি দেখেন গানগুলো পছন্দ হলো না? ও সেটাও তো একটা ব্যাপার! একটা ছবিতে কী ধরনের গান থাকবে এ নিয়েও অনেক ভাবতে হয়। এখন তো মুম্বাইয়ের মতো একটা ছবিতে এমন পাঁচটি গানও হয় যার পাঁচটিই পাঁচ রকমের। তখন সব গান পছন্দ নাও হতে পারে। আইটেম গান তো আমার পছন্দই নয়। তখন হয়তো পাঁচজন সুরকার কাজ করল। আমি করব কি না জানি না। তবে সিনেমার ক্ষেত্রে সুরকারকে সবই করতে হয়। সিনেমার দরকারে অনেক গানই করতে হয়। আমার মা যেমন বলেন, ‘তুমি গান গেয়ে তখনই সফল হবা যখন তুমি সব ধরনের গানেই পারদর্শী। যেটা তোমার ইচ্ছা হয় না সেটা তো তোমার চয়েজ। তবে তুমি যে গান গাইবে সেটা ভালোভাবেই গাইতে হবে। গাইবা না, সেটা আলাদা ব্যাপার।’ তবে সিনেমার প্রয়োজনে গান গাওয়া এবং সিনেমার বাইরে গান গাওয়া একদমই আলাদা। তখন সিনেমার প্রয়োজনে আমাকে সব ধরনের গানই গাইতে হবে।

সব সুর তো সবাইকে দিয়ে হয় নাÑ এতে কি শিল্পী বাছাইয়ে ঝামেলা হয়? আমি আসলে কথা ও সুর এ দুটো করি। যখন কাউকে দিয়ে গাওয়াতে হলে তখন খুঁজতে হয় কাকে দিয়ে গাওয়াবো। বাছাই করতে হয়। এটাই বেশি ইম্পোর্টেন্ট। তবে গাওয়াতে হলে তো আমাকেও এফোর্টও দিতে হবে। গাইয়ে নিতে হবে। কাউকে দিয়ে না হলে তো করবো না। আসলে অনেক কিছুই ভাবতে হয়। যেমন আমার ‘জোনাকি ও জোনাকি’ গানটি। এই জোনাকি ব্যস্ত শহরের নতুনরা কল্পনায় এনে কীভাবে গাইবে, তারা তো জোনাকিই দেখেনি। জোনাকি তো এখন গ্রামেও দেখা যায় না।

আপনি তো বাংলাদেশ বেতারে সুরকার হিসেবেও তালিকাভুক্ত হয়েছেন? ও ভালো কথাই মনে করেছেন। আমি এখনো কাজটি করতে পারিনি। এখনো বেতারে কোনো গানের জন্য সুর করিনি। ওরা তো চানই আমি কাজটি করি। একটা গান ঠিক করে রেখেছি ছোট বোন সামিনাকে দিয়ে গাওয়াব। সময় দিতে পারছি না বলে করতে পারছি না। সামিনারও ব্যস্ততা আছে। তবে হবে- এরমধ্যেই হবে।

টিভিতে কেমন গান করছেন এখন? বিটিভির অবস্থা তো এখন খুবই খারাপ। আসলে কোনো চ্যানেলের অবস্থাই ভালো নয়। এরমধ্যেও লাইভ করছি। তবে গানের প্রোগ্রামগুলো ভালো হচ্ছে না। আগে তো প্রোগ্রামের গান মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। এখন তো গানই হচ্ছে না। নাটকেই বেশি গান চলে। তবে অডিয়েন্স কিন্তু চায়। আমি জানি না, এ নিয়ে তারা জরিপ করে কিনা। আবার গানের কপি রাইট নিয়েও আছে ঝামেলা। কপি রাইট নিয়ে চিন্তা করতে করতেই এখন সময় চলে যায়। আসলে কপি রাইট এক ধরনের জেলখানা।

প্লে-ব্যাকে আপনার উপস্থিতি কম কেন? আসলে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিটা একটা সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। একদম সরাসরি কথা। একটা গ্রুপ আছে যে কোনোভাবেই হোক, ওরা আমাদেরকে দিয়ে গান গাওয়াবে না। এক ধরনের কন্সপিরেসি চলে এখানে। তাতে লাভটা কী হলো? এতে বরং সংস্কৃতি নষ্ট করা হচ্ছে। শিল্পীদের কখনো পলিটিক্স করতে হয় না; যখন এরকম সিন্ডিকেট, পলিটিক্স চলে তখন দেশের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যায়। একটা দেশের সংস্কৃতি নষ্ট হওয়া মানে একটা দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাওয়া। বেশি চালাক হলে শিল্পী হওয়া যায় না; চতুরতা দিয়ে শিল্পী হওয়া যায় না। তারা তখন চতুর হিসেবেই পরিচিত হয়। যখন ওদের শিল্পী সত্তাটি হারিয়ে যাবে আফসোস করবে। যে, এত কাজ করলাম সম্মান তো পেলাম না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে