শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

​​​​​​​মধুপুর গড়ে খাদ্যসংকটে বন্যপ্রাণী!

হাফিজুর রহমান. ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৪৩

বনভূমি উজাড় হওয়ায় এবং বন বিভাগের অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে মধুপুর বনাঞ্চলের প্রাণীদের এদিকে সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী বানরপ্রতি মাসে ৯৭ পয়সা আর হরিণপ্রতি ৩৫৮ টাকার খাবার সরবরাহ করা হয় অপ্রতুল এই বরাদ্দের টান পড়ায় এসব অবুঝ প্রাণীর খাবারসংকট আরও তীব্র হয়ে দাঁড়িয়েছে

আর তীব্র খাদ্যসংকট থাকায় দীর্ঘদিনেও প্রাণীগুলোর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না খাবার না পেয়ে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী এতে অনেক প্রাণী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে আবার অনেক প্রাণী শিকার হয়ে যাচ্ছে ফলে বনাঞ্চলে দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী

বন বিভাগ বলছে, বন্য প্রাণী রক্ষায় গাছের চারা লাগানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইল বন বিভাগ তারই ধারাবাহিকতায় টেকসই বন জীবিকা সুফল প্রকল্প এগিয়ে চলছে এতে বনের ভেতরে বৃক্ষাচ্ছদন বৃদ্ধি পাবে এবং বন্য প্রাণীর খাদ্যসংকট নিরসন হবে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল হিসেবে পরিচিত কিন্তু বনাঞ্চলের দোখলা, জাতীয় সদর উদ্যান, চাড়ালজানী রসুলপুর রেঞ্জের আওতায় বানর-হনুমানের খাদ্য উপযোগী শাল-গজারী, কাইকা, সাইদা, আজুলী, জয়না, ভুতুম, কুম্বি, জিগা, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উজাড় হওয়ায় বন্য প্রাণীর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এর জন্য প্রভাবশালী মহল খোদ বন বিভাগের অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নকে দায়ী করেছেন অনেকে

হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে ঢুকতেই দেখা যায়, দেয়ালের ওপর বানরগুলো পথপানে চেয়ে আছে ব্যারাকের সামনে পৌঁছতেই মুহূর্তেই তিন প্রজন্মের অর্ধশত বানর চার দিক দিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে বিস্কুট বের করা মাত্রই যেন তারা প্রাণ ফিরে পায় কে কার আগে বিস্কুট নিতে পারবে, শুরু হয় সেই প্রতিযোগীতা যে যার মতো পারছে বিস্কুট নিয়ে গালে জমিয়ে রাখছে

আর হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে থাকা হরিণদের খাবার দেওয়া হয় ভুসি কখনো সকাল, কখনো বিকেল কখনো দিনে একবার এক বস্তা ভুসি তিন দিনের জন্য বরাদ্দ অনেক সময় জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ থেকে লোক এসে খাবার দিয়ে যায়

সময় লহরিয়া বিটের কর্মরতদের সঙ্গে কথা হয় তাঁরা জানান, বড় কর্তারা এলে বানর, হনুমানকে বাদাম, কলা দেওয়া হয় ছাড়া অতিথিদের দেওয়া খাবারই ওদের ভরসা অন্যদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকারীভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার বরাদ্দ না থাকায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে ফলে তারা লোকালয়ে চলে যাচ্ছে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ছে এভাবে চলতে থাকলে এক সময় বন থেকে বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল

স্থানীয়রা জানান, এক সময় বনে বাঘ ভাল্লুক থাকলেও বনে মানুষের বসবাস বেড়ে যাওয়ায় এবং বন সংকুচিত হয়ে প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংকট দেখা দিচ্ছে মধুপুরের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জামাল উদ্দিন জানান, মধুপুর বনাঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার বানর-হনুমান রয়েছে এদের কলা, বাদাম বিস্কুট দেওয়া হয় একটি প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় বাজেট আগের চেয়ে কমে গেছে বনের বানর-হনুমানের খাবার সরবরাহের জন্য প্রতি মাসে মাত্র হাজার ৬৮৫ টাকা এবং লহুরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের জন্য ৩২ হাজার ৯৪০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়

জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের রেঞ্জার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, বন্য প্রাণীর খাবারের জন্য প্রতি মাসে রাজস্ব প্রকল্প খাত এই দুই খাতের বরাদ্দ ছিল কিন্তু প্রকল্প বন্ধ থাকায় বর্তমানে শুধু রাজস্ব খাতের বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে এই দিয়েই চালাতে হচ্ছে

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে