বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিয়ের মাধ্যমে বাঘ শুমারী শুরু

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৭

নতুন বছরের শুরুতে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং’র মাধ্যমে তৃতীয়বারের মত শুরু হয়েছে বাঘ শুমারীর কাজ।

রবিবার (১ জানুয়ারী) সুন্দরবনের কালাবগি এলাকায় বাঘ জরিপের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।

তবে বাঘের পাশাপাশি এবারই প্রথম হরিণ ও শূকর গণনা করা হচ্ছে। শুমারীর শুষ্ঠু বাস্তবায়নে সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হচ্ছে জোড়া ক্যামেরা। দেড় বছর ব্যাপী এ শুমারীর ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে।

এ উপলক্ষে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) খুলনা ফরেস্ট ঘাটে ক্যামেরা ট্র্যাপিং বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’র আওতায় বনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় বন অভ্যন্তরে গত ১৫ ডিসেম্বর বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ করা হয় এরপর ১ জানুয়ারী থেকে তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এর আগে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘ জরিপের করা হয়। গত দু’বারে সুন্দরবনের খুলনা, সাতক্ষীরা ও শরণখোলা রেঞ্জে জরিপ’র আওতাভুক্ত ছিল। এবার চাঁদপাই রেঞ্জকেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক বছরে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব না। বনবিভাগের কাছে থাকা সাড়ে ৪শ’ ক্যামেরায় মার্চের মধ্যে জরিপ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। কেননা, শুষ্ক মৌসুমে ক্যামেরাগুলো বসাতে হয়। আর বর্ষা মৌসুমে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভবনা।

সেক্ষেত্রে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে আর চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাঁদপাই, শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ চলবে।

প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, সব মিলিয়ে ৬৬৫টি গ্রিডে জোড়া ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। তার মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি ও চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি মোট ৬৬৫ টি গ্রিডে জোড়া ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। প্রতিটি গ্রিডে ৪০ দিন পর্যন্ত ক্যামেরা থাকবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ক্যামেরার ব্যাটারি ও এসডি কার্ড পরিবর্তন করা হবে।

ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে তোলা ছবিগুলো এ্যানালাইসিসের পর বাঘের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এরপর ২০২৪ সালের জুন-জুলাই নাগাদ প্রকল্পের পক্ষে সুন্দরবনের সর্বশেষ বাঘের সংখ্যা ঘোষণা করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় বাঘ সংরক্ষণে বনবিভাগের ব্যবস্থা: সুন্দরবনে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব মূলত সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য রয়েছে। ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ এবং ভিলেজ কনজারভেশন ফোরামের সকলকে নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করা হবে। বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হলে সুন্দরবনের বাঘ সংক্ষেণ সম্ভব।

বন থেকে কোন কারণে বাঘ গ্রামে চলে আসলে তাকে নিরাপদে সুন্দরবনে ফিরিয়ে নিতে কাজ করা হবে। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনের ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। আগুন নির্বাপণে সেখানে কিছু টাওয়ার স্থাপন করা হবে।

সেখানে প্রয়োজনীয় কিছু ফায়ার ফাইটিং যন্ত্র কেনা হবে। এছাড়া গত ৫ বছরে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন দু’ দিন পানির নিচে থাকে। তখন বাঘ, হরিণ পুকুরের পাশে অবস্থান নেয়। ঐসময় বাঘের নিরাপদ আশ্রয়ে অভয়ারণ্য এলাকায় ১২টি কিল্লা স্থাপন করা হবে। কিল্লাগুলো স্থাপন হলে তারা সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় বাঘ ও বাঘের শিকার করা প্রাণী আরো দীর্ঘ দিন টিকিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেকোরণে প্রকল্পের আওতায় বাঘের পাশাপাশি হরিণ, শূকরের সংখ্যাও নির্ণয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাঘ গণনার কাজ শুরু করার কথা থাকলেও প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় তখন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

পরে পরিকল্পনা কমিশন অক্টোবরে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড় দিলে বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ শুমারির কাজ শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইইউসিএন পৃথিবীতে বাঘকে অতি সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ রয়েছে। ২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি, ১৮টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩টি শাবক।

যাযাদি/মনিরুল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে