শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুকাই পাতা কমায় বহুমূত্র ও উচ্চ রক্তচাপ

চুকুরের পাতার ভর্তা ও কচি কান্ড সালাদ এবং মাছের সঙ্গে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। চুকুর বা মেস্তার ফল গাছের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ- যার মাংসল বৃতি ভক্ষণযোগ্য। ফ্রেশ বৃতি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। তাছাড়া চুকুরের বৃতি দিয়ে আচার, জ্যাম, জেলি, সরবত, সস, জিলেটিন, ফ্লেভার, কেক, আইসক্রিম, সিরাপ, পুডিং ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
অধ্যাপক ড. এ কে এম আমিনুল ইসলাম
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
গাজীপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানের চুকুর ফলের দৃশ্য

চুকুর (চুকাই পাতা) গাছের বহুবিধ ব্যবহারের জন্য এটি মিরাকল পস্নান্ট হিসেবে পরিচিত। বিলুপ্ত প্রায় এই গাছের পাতা, ফুল, ফল, বৃতি, কঁচি শাখা, বীজের তেল খাবার উপযোগী এবং কান্ড থেকে ভালো মানের আঁশ পাওয়া যায়। এর প্রতিটি অঙ্গই উপকারী। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম বিইউ রোজেল-১ নামে এর একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন- যা সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে।

এই গাছের কান্ড থেকে ভালো মানের আঁশ পাওয়া যায়। তাই পাটের বিকল্প হিসেবে চুকাই গাছ চাষ করা হয়। ইংরেজি রোজেল নামের শস্যটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চুকাই, অম্স্নমধু, চুকুল, হইলফা, মেডশ, আমিলা, পুং, উৎমুখরই, খড়গুলা নামেও পরিচিত। চুকুরের পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়। বীজে প্রায় ২০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়, যা খাদ্য উপযোগী। এই তেলে ১৫.৮ শতাংশ পালমিটিক এসিড, ৬.৮ শতাংশ স্টিয়ারিক এসিড, ৫১ শতাংশ অলিক এসিড ও ২৬.৮ শতাংশ সিনোলিক এসিড থাকে। চুকুরের পুষ্টিগুণ খুবই অবাক হওয়ার মতো। তবে সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। চুকুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কবিরাজী চিকিৎসায় চুকুরের গাছের বিভিন্ন অংশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চুকুরের ঔষধি গুণাগুণের ওপর পৃথিবীর বিভিন্ন নামকরা জার্নালে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। চুকুরের এসব গুণাগুণের এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

মেস্তা বা চুকুরের চা জড়ংবষষব ঞবধ নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুব পরিচিত। এই চা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। চুকুরের বৃতির নির্যাসে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে- যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা পালন করে। এর ফুলের নির্যাসে অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে এবং এর নির্যাস পুরুষের শুক্রাণু ধ্বংস কমায়। এ গাছের নির্যাসে উচ্চমাত্রার প্রোটোক্যাটেচিক এসিড থাকে- যা লিউকেমিয়া, লিভার ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ এবং পাইরেক্সিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল জমা হওয়া রোধে বৃতির নির্যাস ভালো কাজ করে। প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে চুকুরের বৃতির নির্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুকুর বীজের তেল বহুবিধ ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। দেহের চর্বি এবং বডিমাস ইনডেক্স কমাতে বৃতির নির্যাস ভালো কাজ করে। দেহের ওজন কমাতে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। লবণ, মরিচ ও গুড় মিশ্রিত চুকুরের রস কফ ও কাশির প্রতিকারে ভূমিকা রাখে। পানিতে সিদ্ধ করে লবণ দিয়েই সবুজ চুকুর পাতা খাওয়া যায়। খেলোয়াড়দের স্ট্যামিনা বাড়ানো এবং তাদের দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স করতে চুকুর বৃতির নির্যাস খুবই উপযোগী।

চুকুরের পাতার ভর্তা ও কচি কান্ড সালাদ এবং মাছের সঙ্গে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। চুকুর বা মেস্তার ফল গাছের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ- যার মাংসল বৃতি ভক্ষণযোগ্য। ফ্রেশ বৃতি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। তাছাড়া চুকুরের বৃতি দিয়ে আচার, জ্যাম, জেলি, সরবত, সস, জিলেটিন, ফ্লেভার, কেক, আইসক্রিম, সিরাপ, পুডিং ইত্যাদি তৈরি করা যায়। এছাড়া চুকুরের বৃতি থেকে চা বানানো যায়- যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে। তাছাড়া বাড়ির আঙিনায় খুব স্বল্প পরিশ্রমে এর চাষ করে পুষ্টির নিশ্চয়তার পাশাপাশি সবজি উৎপাদন করে বাড়তি আয় ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। চুকুর এ দেশে একটি সম্ভাবনাময় ফসল হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বিদেশে চুকুরের প্রচুর চাহিদা থাকায় চুকুর থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য এমনকি শুকনা বৃতি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। বিইউ রোজেল- ১ জাতটি এখন দেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এ কে এম আমিনুল ইসলাম, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে