শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাদবাগানে মিলবে টাটকা শাকসবজি ফলমূল ও পারিবারিক পুষ্টির জোগান

রাবেয়া বসরী
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত শহরমুখী হচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বাস শহরে। নগরায়ণের কারণে শহরের জমির পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনি গাছপালাসহ সবুজও ধ্বংস হচ্ছে। শুধু ইট আর পাথরের নগরী, ধূসর হয়ে পড়েছে ঢাকা। ফলে টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে, পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের হারও বাড়ছে। নগরের বিপুল মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে প্রচুর ফলমূল ও টাটকা শাকসবজি জোগান ঠিক রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, স্কুল-কলেজের মাঠ ও অব্যবহৃত জমিতে ফলের গাছ লাগানো ও শাকসবজি চাষ। এটি দুই দিক থেকে লাভজনক। নগরের বাড়ির ছাদ, স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণ এবং অন্য সহজলভ্য স্থানের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও সবুজায়নের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন করা সম্ভব। পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত ঝুঁকিমুক্ত টাটকা শাকসবজি, ফলমূল ও ফুলের জোগান, পারিবারিক পুষ্টি উন্নয়ন ও আয় বর্ধন করা সম্ভব।

ছাদবাগানের মাধ্যমে ছাদের সৌন্দর্য বাড়ে, পাশাপাশি সীমিত জায়গার সদ্ব্যবহার করে পরিবারের শাকসবজি ও ফলের চাহিদাও মেটানো যায়। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে সবজি ও ফলের আবাদ করলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবজি, ফলচাষ সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবে এবং নিজেদের বাড়িতেও তা প্রয়োগ করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারবে। ছাদে, বিদ্যালয়ের মাঠে ড্রাম, পট, ট্রে ও মাচা তৈরির কৌশল, সার, সেচের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণের মাধ্যমে ছাদ কৃষির টেকসই প্রযুক্তি হবে। পাশাপাশি গৃহস্থালির পচনশীল বর্জ্যকে সার এবং জ্বালানিতে পরিণত করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিকাশ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এটি সহায়ক হবে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নগরীয় কৃষি কর্মকান্ড। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের নগরগুলোতে বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ-ডিম, মুরগির বাচ্চা, মাছের পোনা ও টিসু্য কালচার পদ্ধতিতে উন্নত মানের চারা উৎপাদন হচ্ছে। ঢাকা নগরীতে বর্তমানে বহু ডেইরি ফার্ম আছে। ছাদে ও বসতবাড়িতে ৫০ হাজারের মতো সবজি ও ফলবাগান রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে নগরীতে কৃষির এ সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এবং সমাজ জীবনে এক নতুন প্রযুক্তির বার্তা বয়ে আনছে। নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য নগরীতে শাকসবজি উৎপাদনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীতে কৃষির এ অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে হলে নগর এলাকায় মানসম্পন্ন বীজ, জৈবসার, জৈব বালাইনাশক, মাছের পোনা, হাঁস-মুরগির বাচ্চা, পোল্ট্রি ফিড, মাছের খাবার, পশুখাদ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সরবরাহ বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশের ৩২৪টি নগরে ৩ লাখ পরিবার আছে। কৃষির কোনো না কোনো কর্মকান্ডের সঙ্গে তারা যুক্ত রয়েছে। বাড়ির ছাদে শাকসবজি, ফলমূলের চাষ, বসতবাড়িতে গরু, ছাগল, কুয়েল, কবুতর, হাঁস, মুরগি ও খরগোশ পালন এবং মাশরুম চাষ করে অনেকে পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়েও বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। হাইড্রোপনিকের মাধ্যমে বসতবাড়িতে মাটি ছাড়া সবজি, ফল ও ফুলচাষের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন আমাদের কৃষি বিজ্ঞনীরা।

অ্যাকুয়াপনিকসের মাধ্যমে বসতবাড়িতে, ছাদে ও বারান্দায় একই সঙ্গে মাছ ও সবজি চাষের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে পরিবেশগত দিক থেকেও নগরীতে কৃষি অনেক সুফল বয়ে আনবে। নগরীয়তে কৃষির যত সম্প্রসারণ ঘটবে নগরে ততই কার্বনডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ও তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। হ্রাস পাবে শব্দ ও বায়ুদূষণ, বাড়বে বৃষ্টিপাত। উন্নত হবে নগরের পরিবেশ। বিগত দুই শতক ধরে পৃথিবীর বহু ধনী ও দরিদ্র দেশে নগরীতে কৃষি কার্যক্রম ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীতে কৃষি কর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন ও উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ নগরবাসী তাদের বাড়ি ভিটায়, বহুতল বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, রাস্তার পাশে, নগরের অব্যবহৃত খালি জায়গায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, ও পশুপালন শুরু করেছে।

ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে ছাদবাগানের প্রসার করা যায়, তবে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বায়ুদূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমিয়ে শহরে তাপদ্বীপ প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ কমাবে। ছাদবাগান করতে হলে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি যেমন, উপযোগী ফসল ও জাত, মাটির পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা, শস্য বহুমুখীকরণ প্রভৃতি জানতে হবে। এছাড়া যে বিষয়গুলো খুব বেশি জরুরি, তা হলো- ছাদবাগান টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বেশকিছু ব্যবহৃত কৌশল জানতে হবে।

রাবেয়া বসরী :ক্ষুদ্র কৃষি উদ্যোগক্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে