রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কম পুঁজিতে ভেড়া পালনে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন

কামরুল ইসলাম
  ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
কম পুঁজিতে ভেড়া পালনে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন

কম পুঁজিতে ভেড়া পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খরচ কম, বেশি লাভ হওয়ায় এবং দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নত জাতের ভেড়া পালনে আগ্রহ বাড়ছে খামারিদের। অনেকে সফলতা পেয়েছেন, অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাড়িতে ভেড়া পালন করা খুবই সহজ, সাধারণত ভেড়ার রোগবালাই কম হয়। ভেড়া শান্ত প্রাণী। অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠে।

ভেড়ার প্রজনন ক্ষমতা বেশি, ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যে খামারের আকার বড় হয়ে উঠে এবং ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়। এরা শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তবে কিছু দানাদার খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে ভেড়ার অবদান অনেক। ভেড়া থেকে মাংস, পশম ও জৈব সার পাওয়া যায়। ভেড়া অন্য গৃহপালিত পশুর সঙ্গে এক সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। ভেড়ার মলমূত্র জমির সার হিসেবে উৎকৃষ্ট। একটি ভেড়া বছরে ০.৫ থেকে ০.৭ টন সার জমিতে যোগ করে। ভেড়ার মলমূত্রে গোবরের চেয়ে দ্বিগুণ নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম থাকে।

পৃথিবীর সব দেশেই গৃহপালিত পশু হিসেবে ভেড়া পালন করা হয়। দেশেও আদিকাল থেকে ভেড়া পালন করা হচ্ছে। ফরিদপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী এবং উপকূলীয় জেলাগুলোতে বেশি ভেড়া পালন করা হয়। গরু-ছাগলের মাংসের মতোই ভেড়ার মাংসের চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশে ভেড়ার মাংসই প্রধান খাদ্য। ভেড়া থেকে মাংস ছাড়াও চামড়া ও পশম পাওয়া যায়- যা বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে ভেড়ার পশম খুব মূল্যবান ও জনপ্রিয়। ভেড়ার পশম দিয়ে কম্বল, শাল, সু্যয়েটার, জ্যাকেট তৈরি করা হয়। মোটা পশম কার্পেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

দেশের দক্ষিণের চরাঞ্চলে, পশ্চিমের বরেন্দ্র অঞ্চলে এবং ঢাকা বিভাগের মধুপুর ও ভাওয়াল অঞ্চলে অনেক পরিবারে ভেড়ার পাল রয়েছে। গরু-মহিষের তুলনায় ছাগল পালনের মতোই ভেড়া পালনে সুবিধা রয়েছে। ছাগল-ভেড়া সাধারণত লতা-পাতা, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে এবং গবাদিপশুর সঙ্গেই মাঠে মাঠে চরে খাদ্য সংগ্রহ করে। এদের জন্য আলাদা কোনো খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। পরিমিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভেড়া সাধারণত দলবেঁধে চরে বেড়ায়, রাত্রে খোঁয়াড়ে এসে যায়। এরা সারাদিন বাড়ির আশপাশে মাঠ-ঘাটে চরে ঘাস, খড়কুটা, জমির ফসল কাটার পর পরিত্যক্ত খড়, আগাছা খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। ভেড়া পালনে গরু-মহিষের মতো মোটা অঙ্কের মূলধন বা পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয় না। অল্প পুঁজিতে অল্প জায়গায় কয়েকটি ভেড়া পালন করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। শিক্ষিত বেকার যুবক, দুস্থ ও বিধবা মহিলারা অল্প পুঁজিতে ভেড়া পালন করে দ্রম্নত আয়ের পথ করে নিতে পারেন। ভেড়া পালনে ব্যয় কম এবং বিক্রির পদ্ধতিও অনেকটা সহজ। কসাইখানা ছাড়াও অনেক সময় খামার বা ভেড়ার মালিকরা নিজ ঘরে বা খামারে উৎপাদিত একটি ভেড়া জবাই করে পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে বা গ্রামে সহজেই মাংস বিক্রি হয়ে যায়। পারিবারিক ছোটখাটো উৎসব, যেমন- বিয়ে, খতনা, কুলখানি, চেহলাম ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য ভেড়া ক্রয় করা যেতে পারে। ভেড়া ছোট প্রাণী বিধায় বাজারজাতকরণের জন্য সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহণ করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে