সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উত্থান বিস্ময়কর সাফল্যের ধারাবাহিকতা

অধ্যাপক ডক্টর মো. মোতাহার হোসেন
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা এ দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি প্রধানত কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষিই বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের প্রধানতম উৎস। কৃষি শুধু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না সেই সঙ্গে জাতীয় প্রবৃদ্ধির উন্নয়নে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, কৃষি উৎপাদন ১০০ শতাংশ বাড়লে দারিদ্র্যে হার ০.৫ শতাংশ হ্রাস পায়। অর্থনীতির অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি দ্বিগুণ করা সম্ভব। তাইতো বিগত দেড় দশকে কৃষি খাতে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার উলেস্নখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৬ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ, ২০২২ সালে তা অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস পেয়ে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে চরম দারিদ্র্যতার হার ২৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে মানুষের গড় আয়ু প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২৪ নভেম্বর, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১০টি লক্ষ্যই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

ইতোমধ্যেই বর্তমান সরকার সবার জন্য সারাবছর নিরাপদ পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও দারিদ্র্য কৃষকের আয় ও খামারের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করা এবং টেকসই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনের পথে কৃষির প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ হতে পারে অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ থেকে কৃষি রপ্তানি গত পাঁচ বছর ধরে ১৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারের রপ্তানি। কৃষি পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদাও ভবিষ্যতে ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে- যা বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পকে তার রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য একটি বড় সুযোগ প্রদান করবে।

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত একটি খাত। শিল্পটি বাংলাদেশের দ্রম্নত বর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে দেশের শ্রমশক্তির একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ নিযুক্ত। কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান জিডিপিতে এখন ৭.৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে ৪৮৬টি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনা রয়েছে- যার মধ্যে ২৪১টি রপ্তানিকারক এবং ২৩৫টি অভ্যন্তরীণ বাজার পূরণ করে থাকে। এই শিল্পে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষি এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য থেকে ১.১৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে- যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৩.০৬ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে বিলিয়ন ডলার আর্নার ক্লাবে কৃষি পণ্যের প্রবেশ তৈরি পোশাকের ওপর অতি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশের অতি-প্রয়োজনীয় রপ্তানি পণ্যসম্ভারে নতুন বৈচিত্র্য সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মোট রপ্তানিতে এর অংশ এখন প্রায় ৩.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অবদানই বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৩টি মৌলিক কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ১৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষিপণ্যের বিভিন্ন উপখাতের তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ করলে এ শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিমাণ কৃষিপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে তার অধিকাংশেরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

পৃথিবীতে তাজা পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেলেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা। শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, উন্নয়নশীল দেশেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের অভ্যন্তরীণ আকার ছিল ৫.২ বিলিয়ন ডলার- যা বর্তমান বছরে ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বলে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন। ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা প্রায় ৬ শতাংশ হারে অবিচিছন্ন ভাবে বৃদ্ধি পাবে। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার ফলে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত শিল্প দ্রম্নত বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।

ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজার বর্তমানে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অধিক আকার ধারণ করেছে। বাজারটি বিগত এক দশকে গড়ে ৭.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের উদীয়মান অভ্যন্তরীণ বাজার বৃহৎ এবং তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত- যাদের গড় বয়স ২৭ বছর। দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে দ্রম্নত নগরায়ণ, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ, ছোট পরিবার বৃদ্ধি এবং ব্যস্ত জীবনধারা প্রক্রিয়াজাত খাবারের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করছে। দেশে মাথাপিছু দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের ব্যবহার এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশকৃত সর্বোত্তম স্তরের নিচে থাকা সত্ত্ব্বেও দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের বাজার ক্রমশ ও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই ক্রমবর্ধমান ক্রয় ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে মিল রেখে ২০০৯ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের ব্যবহার বার্ষিক ১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই খাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিশাল। ভোজ্যতেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্যাকেটজাত খাদ্য পণ্য- যার বার্ষিক চাহিদা ২০১৮ সালে প্রায় ৩ মিলিয়ন টন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাহিদা ৮ থেকে ১২ শতাংশ বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষা এবং রাইস ব্রান অয়েল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বর্তমানে ০.৩ মিলিয়ন টন। সরকার সরিষা এবং চালের তুষের তেল উৎপাদনকারীদের জন্য সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা প্রদান করছে। ফলশ্রম্নতিতে আগামী দিনগুলোতে এ সমস্ত পণ্যের উৎপাদন ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে মিটিয়ে রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাঁস-মুরগির খামারের বিকাশের সঙ্গে বাংলাদেশে মাংসের ব্যবহার গড়ে ১৫ শতাংশ হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া, বেস্তোরাঁ ও হোটেলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সারাদেশে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের চাহিদা বাড়িয়েছে। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল অনুসারে ২০১৮ সালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ১৩ শতাংশ বা তারও বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী হালাল মাংসের বাজার বাংলাদেশি শিল্পকে অন্বেষণ করার জন্য একটি অতিরিক্ত সুযোগ প্রদান করবে। বাংলাদেশে হিমায়িত এবং রান্নার জন্য প্রস্তুত খাদ্য বিভাগটি গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে দ্রম্নত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে বাজারের আকার ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল এবং ২০২৪ সালের মধ্যে তা প্রায় ৩৫৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কোমল পানীয় সারাদেশে দ্রম্নত বর্ধনশীল সেগমেন্টগুলোর মধ্যে একটি। মর্ডর ইন্টেলিজেন্স ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোমল পানীয়ের বাজার ৬১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করেছে এবং এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ১২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির আশা করছে- যা বিনিয়োগের জন্য একটি বিশাল সুযোগ তৈরি করবে। ক্রমবর্ধমান মধ্যম আয়ের শ্রেণি এবং পরিবর্তিত জীবনধারার সঙ্গে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রচুর কৃষি সম্পদে প্রবেশাধিকার: বাংলাদেশ গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু এবং উর্বর মাটি দ্বারা আশির্বাদপুষ্ট। এ দেশের মাটি এবং জলবায়ু বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসল, ফলমূল, শাকসবজি, পশুসম্পদ ও মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি উপযোগী। সরকারি নীতি সহায়তা, বিপুলসংখ্যক কৃষকের অবদান এবং উর্বর মাটি থেকে উপকৃত হয়ে বাংলাদেশ আজ ধান উৎপাদনে তৃতীয়, আলুতে ৬ষ্ঠ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, পশুসম্পদে বিশ্বের ১২তম। পেয়ারা, কাঁঠাল, আম উৎপাদনেও বিশ্বের সেরা দশে বাংলাদেশের নাম। তাই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামালের সর্বরাহের পর্যাপ্ততা রয়েছে। প্রচুর কৃষি সম্পদে প্রবেশাধিকার থাকায় বাংলাদেশ কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য আজ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও রপ্তানিতে প্রণোদনা: কর রেয়াত ও নগদ সহায়তার মতো বর্তমান সরকারি প্রণোদনা কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল ও শাকসবজির প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত শিল্প উদ্যোগের জন্য অবস্থানের উপর নির্ভর করে ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য করপোরেট আয়কর (সিআইটি) হ্রাস করা হয়েছে। রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে ১০ বছর পর্যন্ত আয়ের উপর সম্পূর্ণ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটগুলিতে বিদু্যৎ খরচের ওপর ২০ শতাংশ বিশেষ ছাড় প্রদান করছে। রয়্যালটি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান/সহায়তা-সম্পর্কিত ফি'র ওপরও কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিতেও শুল্ক অব্যাহতি রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাভের সম্পূর্ণ এবং প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। রপ্তনিকারকদের জন্য রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানি পণ্যের ওপর কোনোরকম ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে না। এসব প্রণোদনার কারণে ৪ বছর ধরে এখাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা এবং উৎপাদন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বিপণন কৌশলের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। তাই যে কোনো ফসল উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করতে হবে। ভবিষ্যতে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে ফাইটোসেনেটারি সনদ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। যদিও এই সমস্যা সমাধানে কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ঢাকার পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিয়েটেড পরীক্ষাগার স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি নিরাপদভাবে উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা জড়িত রয়েছে- যা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আধুনিক পরীক্ষাগার স্থাপন, বিশেষায়িত হিমাগার, প্রক্রিয়াগার এবং প্রোডাক্ট প্যাকেজিং করার মতো আধুনিক অবকাঠামো তৈরি, অধিক সেল্ফলাইফ সম্পন্ন প্রক্রিয়াজাত উপযোগী খাদ্য উৎপাদনে ফলপ্রসূ গবেষণা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে কৃষিপণ্য রপ্তানি বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার মিশনও দ্রম্নত সফলকাম হয়ে উঠবে।

লেখক: পরিচালক, আইকিউএসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে