সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টি ও ভেষজগুণে ভরপুর ভুট্টা

কৃষিবিদ আব্দুল আজিজ
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পৃথিবীতে মানুষ ও পশুপাখির খাদ্যের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এর জোগানের ক্ষেত্রে ধান এবং গমের পাশাপাশি ভুট্টাও পিছিয়ে নেই। উৎপাদনের দিক থেকে দানাদার শস্য হিসেবে পৃথিবীতে ভুট্টার স্থান তৃতীয়। তবে ফলনের দিক থেকে প্রথম। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী চিলি, মেক্সিকো, ক্যারিবিয়ান, কিউবা, গুয়াতেমালার জনগণ মাথাপিছু ৮১ কি. গ্রাম (প্রায়) ভুট্টা গ্রহণ করে- যা খাদ্য থেকে আহরিত মোট ক্যালোরির ৬৯ শতাংশ। শুধু গবাদিপ্রাণী, পোল্ট্রি এবং মাছের খাবারের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ৩ লাখ টন ভুট্টা দরকার। যদিও এর আবাদ দিন দিন বাড়ছে। সব ধরনের মাটিতে ভুট্টা চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এর উৎপাদন খরচ কম। তাই লাভ বেশি হয়। এসব বিবেচনায় আমাদের দেশে ভুট্টা আবাদে রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা।

পুষ্টি ও ভেষজগুণ: ভুট্টায় পুষ্টি ও ভেষজগুণে ভরপুর। এর দানায় যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ রয়েছে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। হজমে সহায়তা করে। শরীরে শক্তি জোগায়। ভুট্টার হলুদ দানাগুলো ক্যারোটিন বিদ্যমান হওয়াতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। আছে অ্যান্টি-অক্সিন্টের মতো মূল্যবান উপাদান। ভুট্টা খেলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। রক্তশূন্যতা দূর করে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখে।

জাত: ভুট্টার দেশি-বিদেশি অসংখ্য জাত রয়েছে। দেশির মধ্যে বর্ণালি, মোহর, শুভ্রা, খইভুট্টা, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭, বারি মিষ্টিভুট্টা-১, ডাবিস্নউএমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ন-১, ডাবিস্নউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-১ অন্যতম।

চাষপদ্ধতি: মাটির জো অবস্থায় ৫ থেকে ৬টি আড়াআড়ি চাষ দিয়ে এরপর মই দ্বারা মাটিকে সমান করতে হয়। রবি মৌসুমের জন্য ভুট্টার বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর। আর খরিফ মৌসুমে মধ্য ফেব্রম্নয়ারি হতে ৩০ মার্চ। বীজ অবশ্যই সারিতে বপন করতে হবে। এক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ১০ ইঞ্চি। অন্যান্য ফসলের ন্যায় ভুট্টা চাষে পরিমিত সার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। তাই প্রতি হেক্টর জমির জন্য যে পরিমাণ সার প্রযোজ্য তা হচ্ছে- ইউরিয়া ২৭৫-৩২৫ কেজি, টিএসপি ১৭৫-২২৫ কেজি, এমওপি ১০০-১৫০ কেজি, জিপসাম ১৫০-১৭৫ কেজি, বরিক এসিড ৬-৮ কেজি। এছাড়া ৫-৭ টন গোবর ব্যবহার করলে ভালো হয়। জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে তিনভাগের একভাগ ইউরিয়া এবং অন্যান্য সব সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি ইউরিয়াকে সমান দুই ভাগ করে একভাগ চারা গজানোর ৩০-৩৫ দিন পর এবং বাকি অংশ ৬০-৬৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১৫-২০ দিন হলে অতিরিক্ত গজানো চারা তুলে ফেলা উচিত। এ সময় জমিকে নিড়িয়ে দিলে একদিকে যেমন আগাছা দমন হবে, অন্যদিকে মালচিংও হয়ে যাবে। চারা গজানোর পর থেকে এক মাস পর্যন্ত জমিতে আগাছা থাকতে নেই। ইউরিয়া সারের প্রথম উপরি প্রয়োগের পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে দিতে হয়।

ভুট্টাক্ষেত সব সময় রস থাকা দরকার। রসের অভাব দেখা দিলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে চারা গজানো, ফুলধরা এবং দানা গঠনের সময় রসের সংকট হলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। জলাবদ্ধতা দেখা দিলে দ্রম্নত পানি বের করে দেওয়া ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, ভুট্টা জলাবদ্ধতা মোটেও সহ্য করতে পারে না। যদিও ভুট্টায় রোগ ও পোকার আক্রমণ কম। তার পরেও বালাই দেখা দিলে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংগ্রহ ও ফলন : ভুট্টার মোচার রং খড়ের মতো এবং পাতা কিছুটা হলদে হয়ে গেলে কিংবা দানার গোড়ায় কালো দাগ দেখলে বুঝতে হবে এখনি ফসল কাটার সময়। মোচা সম্পূর্ণ পাকার আগে ভুট্টা সংগ্রহ করা ঠিক নয়। হেক্টর প্রতি এর গড় ফলন ৪-৭.৫ টন। তবে হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে ৯.৫-১৩ টন প্রায় হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে