শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাঁড়িয়ে আছে বিরল 'পারুল'

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বগুড়ার সোনাতলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি নাজির আখতার কলেজ। ১৯৬৭ সালে ১৯ বিঘা জায়গার ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে 'সোনাতলা কলেজ' নাম ছিল এটির। শিক্ষানুরাগী ও দানবীর সৈয়দ নূরুল হুদা নিজের কবরের জন্য ১ শতক জায়গা রেখে তার পৈতৃক বসতবাড়ির পুরোটাই কলেজের জন্য দান করে দেন। তার ভাই সৈয়দ নজমুল হুদাও কলেজটিতে জমি দান করেন। তাদের বাবা সৈয়দ নাজির আলী এবং মা আখতারুন্নেছার নামানুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় 'সোনাতলা নাজির আখতার কলেজ'। ১৯৮৪ সালে কলেজটি সরকারি হয়। এখন উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ছাড়াও ৬টি বিষয়ে এখানে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়।

আর এই কলেজ চত্বরেই দাঁড়িয়ে আছে বিরল বৃক্ষ পারুল। বিরল বলছি এই কারণেই যে সুদূর অতীতে ভূ-ভারতে তথা বঙ্গদেশে দু-একটি পারুলগাছ থাকলেও তা আজ বিলীন। প্রায় ৪০-৫০ ফুট উঁচু গুল্মজাতীয় এ গাছটি সারাদেশেই বিরল বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও বৃক্ষ গবেষকরা। গাছটির পৃষ্ঠদেশ কিছুটা ধূসর কালচে ধরনের। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। পাতার আকার ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি। শীতকালে গাছটির পাতা ঝরে যায়। এপ্রিল মাসে পুষ্প-পলস্নবে সুশোভিত হয়ে ওঠে গাছটি। এ সময় সারা গাছে পাতার ফাঁকে-ফাঁকে অজস্র সাদা সাদা ফুল ফোটে। সাদা ফুলগুলোর দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চির মতো। গাছটিতে প্রায় ১০ ইঞ্চির মতো চিকন বাঁকানো ফল হয়। ফলগুলো শুষ্ক হয়ে ঝরে পড়ে। ফুলগুলোর তেমন

\হগন্ধ অনুভূত না হলেও তাতে অজস্র ভ্রমরের গুঞ্জনে কলেজ চত্বরে অভাবনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ফুল ফোটা অবস্থায় গাছটি পর্যবেক্ষণ করেছেন বৃক্ষপ্রেমী ও গবেষক, যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আমিরুল আলম খান। তিনি পরীক্ষার জন্য গাছটির পাতা, ফুল ও ফল ঢাকায় নিয়ে গিয়েছেন। বৃক্ষ নিয়ে সারাদেশ চষে বেড়ানো প্রফেসর আমিরুল আলম খানের ভাষ্য, 'এটি বাংলাদেশের অবশ্যই একটি বিরল প্রজাতির গাছ। গাছটি মূল পারুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা গাছটির পাতা, ফুল ও ফল নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে এ গাছটি বাংলাদেশের একমাত্র বিরল প্রজাতির গাছ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে গাছটির বংশবৃদ্ধি করা দরকার'।

তিনি পারুল নিয়ে 'পারুলের সন্ধানে' নামক একটি গ্রন্থও লিখেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, 'সারা বাংলাদেশে মূল পারুল না পেয়ে তিনি চলে যান পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে। উদ্দেশ্য যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পারুল নিয়ে অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন তাই তারই হাতেগড়া দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষতে ভরা শান্তিনিকেতনে যদি পারুলের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি তার বইয়ে লিখেছেন, শান্তিনিকেতনের উদ্যান আধিকারিক তাকে জানান, তারা নাকি আসমুদ্র হিমাচল চষে বেড়িয়েছেন পারুলের সন্ধানে। এ শূন্যতা পূরণে শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি পারুলডাঙ্গায় অনুসন্ধান চালান তারা। তাদের ধারণা, জায়গার নাম পারুলডাঙ্গা তাই সেখানে গেলে নিশ্চয়ই পারুলের খোঁজ পাওয়া যাবে। অনেক অনুসন্ধান করেও তারা হতাশ হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে