শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের হতাশা এবং প্রত্যাশা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সব পাবলিক পরীক্ষা। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাসে প্রমোশন দেওয়া হলেও আটকে আছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। শুধু মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষাই এখনো নেওয়া হয়নি। ফলে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা। তবে দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছুদের জন্য করোনা হয়ে এসেছে অভিশাপের মতো। হতাশাগ্রস্ত এসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম
নতুনধারা
  ২৬ জুন ২০২১, ০০:০০

একটা অন্যরকম জীবন

বদরুন নাহার লুনা

এইচএসসি, ২০২০

ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে খুবই মেন্টাল প্রেসারে রয়েছি। বারবার পরীক্ষা পেছানোয় হতাশা কাজ করছে।

অনেক আশা নিয়ে, অনেক ভালো করে পড়া শুরু করলে কয়েকদিন আগে যখন জানা যায় পিছায় যাবে তখন একটা কেমন জানি হতাশা ভিড় করে। মনে অনেক ক্লান্তি লাগে, পড়ার ইচ্ছাটা হারিয়ে যায়। সেই সঙ্গে নিয়মিত পড়ার ইচ্ছাটাও চলে যাচ্ছে। এডমিশনের একটা বিচ্ছিরি চাপ, এটার জন্য ডিপ্রেশন, মন খারাপ সব এক সঙ্গে ভর করে। কেমন জানি, একটা বিতিকিচ্ছি অবস্থা। যা তোমার হাতে নেই। কোনো রফবহঃরঃু নেই, কোনো ভরসা নেই। যে কেউ এসে ধঁঃড়ঢ়ধংং বলে বলে একটা ব্যঙ্গ করে চলে যাচ্ছে। প্রাণবন্ত ভাবগুলো কেমন যেন বিষণ্নতায় পরিণত হচ্ছে।

দুশ্চিন্তা বাড়ছে

সাকিবুল হাসান

এইচএসসি, ২০১৯

সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা

২০১৯ সালের মার্চ মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরপরে যেন স্থবির হয়ে পড়ে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাকার্যক্রম। ১ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনো খোলা হয়নি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে করোনা পরিস্থিতিও ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন তারিখগুলোও পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। যারা প্রথমবারের মতো পরীক্ষার্থী তারা যেমন দুশ্চিন্তায় আছে, দুশ্চিন্তায় আছে আমার মতো দ্বিতীয়বার ভর্তিপ্রত্যাশীরাও। যদিও এখন সময়টা খুব কঠিন যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য, তবুও আমার মনে হয় করোনাভাইরাসের একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান এবং সবাইকে টিকা প্রদানের আগে কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ ভর্তিপরীক্ষা মানেই জনসমাগম আর কোলাহল। আপাতত ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

হতাশার পালস্না ভারী হচ্ছে

সুমাইয়া অবন্তি খান

এইচএসসি, ২০২০

ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিলস্না

ভর্তি পরীক্ষা বারবার পিছিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে হতাশা। একই সঙ্গে, করোনার মতো মহামারির কথা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়? এটা অনেকটা দিবালোকের মতো সত্য যে শিক্ষাজীবনের সফলতা, অর্জন, জীবনের গতিপথ নির্ধারণ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক এই ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে থাকে নানান ত্যাগ- তিতিক্ষা ও স্বপ্নের গল্প। রবার্ট ব্রম্নসের গল্পের মতো এখানে বারবার চেষ্টার সুযোগ নেই। তাই আমার মনের নানাবিধ স্বপ্নগুলো পূরণের সুযোগ থাকছে একবারই। স্বপ্নগুলো এ পর্যায়ে কখনো আমার একার নয়, আমার বাবা-মা থেকে শুরু করে অনেকের স্বপ্ন। কখন পরীক্ষা হচ্ছে এই কথা নির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ নেই, আমার প্রস্তুতি কি সঠিক পথে এগোচ্ছে, আমি পরীক্ষা দিয়ে সত্যি সফল হবো, এমন অনেক দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কজুড়ে বসত করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কারও হয়তো আর কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কারও স্বপ্নের যবনিকাপাত হবে, প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা না রাখায়। এমন অবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের, তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমাদের আগামী।

সুন্দরের প্রত্যাশায়

তাসমিয়া কাইয়ূম

এইচএসসি, ২০২০

শেখ হাসিনা উইমেন্স কলেজ

মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় ২০২০ এইচএসসি ব্যাচ মানেই কি হতভাগা? করোনার জন্য আমাদের অ্যাডমিশন ভর্তি কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। যার ফলে আমরা অনিশ্চয়তায় ভুগছি পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছি এবং মানসিকভাবেও অনেক শক্ত থাকতে হচ্ছে আবার অনেকেই ইতিমধ্যে মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েছে। দীর্ঘ সময় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের মধ্যে একঘেয়েমি চলে এসেছে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এভাবে যদি চলতেই থাকে আমরা দিন দিন যে মেধাশূন্য হয়ে যাব তাতে আর সন্দেহ নেই। কারণ চলমান পড়াশোনা আমাদের মেধা সচল রাখে। আমাদের এইচএসসি ২০২০ ব্যাচকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে আর সামনে কি হবে তাও অজানা তবুও শেষটুকু সুন্দর হোক এই প্রত্যাশাই রাখছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে