শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২২তম বর্ষে পদার্পণ

ম সিনথিয়া সুমি
  ২৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

শুভ জন্মদিন প্রাণের ক্যাম্পাস। দেখতে দেখতেই আরও একটি বছর কেটে গেল কীভাবে, তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এরই মধ্যে আবারও চলে এলো বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। গৌরবের ২১ বছর। (৮ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ২২তম বছরে পদার্পণ করল। এটি দেশের ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। সবারই স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার, তেমন আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। হয়তো করোনার জন্য খুব বেশিদিন ক্যাম্পাসে থাকার সৌভাগ্য হয়নি আমার তাও অনেকটা ভালোবাসি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে। বর্তমানে শিক্ষাজীবনের এক অন্যতম স্বর্ণ-উজ্জ্বল সময় পার করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) আমার পরিচয়, অস্তিত্ব, অহংকার। আমার স্বপ্নপূরণের স্থান। শুধু আমার একার নয়, আমার মতো এমন হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের স্থায়ী ঠিকানা। ৮ জুলাই বশেমুরবিপ্রবি দিবস।

এ বছর ২২তম বর্ষে পদার্পণ করছে ভালোবাসার বিদ্যাপীঠটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নাম হলো বশেমুরবিপ্রবি। আর ইংরেজি নাম হলো ইঝগজঝঞট. আমার দেওয়ার মতো তেমন কোনো পরিচয় নেই; কিন্তু তারপরও কেউ প্রশ্ন করলে তাকে উত্তরে যখন বলি, আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন অনেক ভালো লাগে। অন্যদের কাছ থেকে অসম্ভব রকম সমীহ পাই। আমি তোমার পরিচয়ে পরিচিত বশেমুরবিপ্রবি। জাতির জনকের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ২০০১ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে ২০১১ সাল থেকে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১২ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ৮ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫৫ একর আয়তনের ফাঁকা ক্যাম্পাসে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি বিভাগের মোট ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিদ্যাপীঠটি। বর্তমানে অনেক পরিবর্তন এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস। চারদিকে গাছপালা, ভবন, খেলার মাঠ, মনোরম পরিবেশ, বিভিন্ন চত্বর, লেকপাড় সব মিলে চমৎকার লাগে প্রিয় ক্যাম্পাসটি। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। রয়েছে ৩৪টি বিভাগ, ৭টি অনুষদ ও ৩টি ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ছাত্রদের জন্য ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য ২টি হল, যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। রয়েছে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন এবং একুশে ফেব্রম্নয়ারি লাইব্রেরি ভবন, ক্যাফেটোরিয়া, মন্দির এবং প্রধান ফটক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দিত কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাস। কেননা ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়িতে অবস্থানরত। গত বছর করোনা মহামারির পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা সম্ভব হয়নি তবে এবারও সঠিক তারিখে তা হচ্ছে না। আমরা ইতিমধ্যে অবগত আছি যে ঈদুল আজহা ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কার্যক্রম আগামী ২৮ জুলাই পালন করা হবে। হয়তো অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পালিত হবে দিবসটি।

সত্যি বলতে ভর্তি পরীক্ষা মূলত একটি যুদ্ধক্ষেত্র আর পরীক্ষার্থীরা হলো সৈনিক। এত যুদ্ধ করে যখন চান্স পাওয়া হয়, তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা তো থাকবেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান বিকাশের জায়গা। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ক্যাম্পাসে তিন মাসেরও কম সময় অতিবাহিত করতে পেরেছিলাম। কারণ হঠাৎ করেই শিক্ষার শুরুতে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কয়েক মাসে অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছিল, তাই স্বপ্নের এই ক্যাম্পাসের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বদৌলতে আমার অনেক কিছু দেখার কিংবা শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর কোভিড-১৯ এর কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবং অনুভব করেছিল ক্যাম্পাসের শূন্যতা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছুই আমাদের মুগ্ধ করে তোলে, তা হলো সবার বন্ধুসুলভ আচরণ। সেখানে কেউ কোনো বিপদে পড়লে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে আসে। শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়র, ভাইয়া-আপু থেকে শুরু করে ক্লাসমেট, নন-ডিপার্টমেন্ট সবাই এগিয়ে আসে, তা সত্যিই কতটা ভালো লাগার, তা বোঝাতে পারব না। এ প্রতিষ্ঠান আমাকে দিয়েছে বন্ধুসুলভ শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা পস্ন্যাটফর্ম।

তবে নতুন সূর্য মানেই যেন নতুন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার আরও একটা অপার সম্ভাবনা। প্রায় ১২ হাজারেরও অধিক এমন স্বপ্নকে ঠাঁই দিয়ে তাদের জীবনকে রঙিন করে তোলা তীর্থভূমিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য অনেক আনন্দের ও গৌরবের দিন। এইদিনে ক্যাম্পাস বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়। নানান রকমের কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে বলতেই হয় যে বিদ্যাপীঠে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পার করছি সেই বিদ্যাপীঠ যেন খুব উচ্চপর্যায়ে সব বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে এগিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবাসন-সংকট নিরসনসহ বিভাগের যাবতীয় সমস্যা সমাধানসহ গবেষণার যথাযথ ব্যবস্থা করবে প্রশাসন, এই কামনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে