শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব

নানান কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য বৃক্ষ কাটা হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যোৎপাদন। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। তাই আমাদের এখন অধিক বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন
মো. নাজমুচ্ছাকিব
  ৩০ জুলাই ২০২২, ০০:০০

বৃক্ষ কর্তন বন্ধ করুন

আখতার হোসেন আজাদ

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে যেভাবে বৃক্ষ নিধন করছি, তাতে আমাদের এই পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত আমাদের উপর আছড়ে পড়ছে। নিজেদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য হলেও আমাদের চারপাশকে সবুজায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যদি প্রতি বছর নিজ জন্মদিনে একটি করে চারাগাছ রোপণ করে এবং বিভিন্ন উৎসবে যদি চারাগাছ উপহার দেবার প্রথা প্রচলন শুরু হয়, হলফ করে বলতে পারি, অচিরেই পৃথিবীর পুরনো রূপ আমরা ফিরে পাব।

ব্যবসার অজুহাতে বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে

মোহাম্মদ নাদের হোসেন ভূইয়া

শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ

একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসার নামে বড় বড় গাছ কেটে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায় এটি বেশ লক্ষণীয়। তারা গাছের মালিককে টাকার লোভে ফেলে কেটে নিচ্ছে বড় বড় সব গাছ। যা চওড়া দামে বিক্রি করছে। ফলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যার বিধ্বংসী প্রভাব আমরা লক্ষ্য করছি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে। যা দেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। অথচ জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রের মোট ভূখন্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন কিন্তু এ দেশে তা আছে আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে অচিরে হারিয়ে যাবে জীবন রক্ষাকারী বন্ধু গাছ। সাথে দেখা দেবে চরম অক্সিজেন সংকট। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়বে আগামী প্রজন্মের উপর। এখনি পদক্ষেপ না নিলে কোনো একসময় হয়তো বড় বড় এই সব গাছ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই বৃক্ষ নিধনের এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়ার বিকল্প নেই। এতে পরিবেশ ফিরে পাবে তার নান্দনিকতা।

\হ

বৃক্ষ নিধন বিরোধী প্রতিবাদী ছড়িয়ে যাক সর্বত্র

আয়েশা সিদ্দিকা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় যেখানে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত সেখানে সরকারি তথ্যমতে বাংলাদেশে আছে ১৭ শতাংশ। 'একটি গাছ কাটলে, সেখানে দুটো গাছ লাগান' এই স্স্নোগানের নেই কোনো বাস্তবিক কার্যকারিতা বাংলাদেশে। বরং তিনটি গাছ কাটলে সেখানে লাগানো হচ্ছে একটি গাছ। অনেক সময় জায়গা স্বল্পতার কারণে লাগানোও হয় না নতুন গাছ। সাম্প্রতিক সময়ে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলে চলছে ব্যাপকহারে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ঘটনা। রেহাই পাচ্ছে না সরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার ধারে গাছপালাগুলোও। এই বৃক্ষ নিধনের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ার সূচি পরিবর্তন হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, খরা, ঘন ঘন বন্যা, বৃষ্টিপাত। ভবিষ্যতে হয়তো এই বৃক্ষ নিধনের ফলাফল আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই এই মারাত্মক রূপের খেসারত দেওয়ার আগে সরকারের উচিত বৃক্ষ নিধন নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সেই সঙ্গে জনগণেরও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি উচিত গাছকে ভালোবাসা। তবেই দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠবে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদী মনোভাব।

শুরু হোক সবুজের অভিযান ভরে উঠুক দেশ ও প্রাণ

জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি

শিক্ষার্থী, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়

গাছ নিধনের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে কীভাবে কম সময়ে কার্যকরী পদ্ধতি বের করা যায় সেদিকে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। অঞ্চলভেদে দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে উক্ত জোনে গাছ নিধনের কারণ, নিধন ও রোপণ হার ইত্যাদি সমীক্ষার মাধ্যমে বের করে সেই অনুযায়ী সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যে সব অঞ্চলে যে ধরনের গাছ ভালো জন্মে সে সব অঞ্চলে সেই ধরনের গাছ রোপণ এবং বাগান করতে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা গেলে একই সঙ্গে তারা গাছ লাগাতে তৎপর হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে ছাদবাগানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে। ছাদবাগান টাটকা ফলমূল ও সবজি প্রদান করার পাশাপাশি সৌন্দর্যও বর্ধন করে। সেই সঙ্গে কাঠের তৈরি জিনিসপত্রের বিকল্প ব্যবহারও খুঁজতে হবে যা কাঠের থেকে সহজলভ্য। ক্ষুদ্র পরিসরের এই চিন্তা-ভাবনা বৃহদাকারে জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারলেই বৃক্ষ নিধন রোধ হবে এবং দেশ ভরে উঠবে সবুজের সমারোহে।

বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে

তুলুন নিজেই

রিম্পা খাতুন

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

প্রতিনিয়ত নিজেরাই নিজেদের পরিবেশকে দূষণের সর্বোচ্চ সীমারেখায় নিয়ে যাচ্ছি। প্রাকৃতির উপাদানগুলোকে হুমকির মুখে ফেলছি পরোক্ষভাবে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনকেই হুমকির মুখে ফেলেছি। আর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দ্রম্নত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বৃক্ষনিধন, বনভূমি উজাড়, শিল্প কারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, পস্নাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড়ই নিষ্ঠুর। যার নজির আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবী তো একটাই, আর এ পৃথিবীর বাসিন্দা আমরাই। পরিবেশকে রক্ষা করলে, বাঁচবে পৃথিবী। একা কারোর পক্ষেই পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। আমাদের নিজ উদ্যোগে বেশি বেশি গাছ রোপণসহ বন্যপ্রাণীও রক্ষা করা উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে। এককথায়, সরকারসহ প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেরা নিজেদের জন্য হলেও পরিবেশের প্রতিটি উপাদানকে রক্ষা করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে