রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিন্ন সংস্কৃতি থাকা সত্ত্বেও পাচ্ছে না নিজস্ব পরিচয়

আদিবাসী, উপজাতি না ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তা নিয়ে রয়েছে নানা মতান্তর। জাতিসংঘ কর্তৃক ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস অনুমোদন পেলেও বাংলাদেশে নেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি। এর ফলে আদিবাসীগোষ্ঠী হারাচ্ছে তাদের নাগরিক অধিকার। ভূমির মালিকত্বসহ ভুগছে নানামুখী সমস্যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন হুমায়রা রহমান সেতু।
হুমায়রা রহমান সেত
  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আদিবাসী ভাষায় উচ্চশিক্ষা সুনিশ্চিত

করতে হবে

উদয় চাকমা

কক্সবাজার হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ

আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও ভূমি রয়েছে যা অন্যদের থেকে আলাদা। সে হিসেবে আমরা আদিবাসী এই পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ সীমান্তে সামরিক তৎপরতার অজুহাত দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশ সরকার আমাদের আদিবাসী হিসেবে অস্বীকার করছে। আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘ কাজ করে চলেছে যার প্রতিফলন তেমন একটা আমাদের দেশে বিরাজমান নেই। মূলত, ভূমি অধিকার প্রশ্নে বুর্জোয়া সরকার আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ফলে আমরা পাচ্ছি না কোনো নাগরিক অধিকার। আমাদের বসত কেটে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। জুম চাষ আমাদের প্রধান কৃষিকর্ম যা দিন দিন কমে যাচ্ছে পাহাড় কর্তনের ফলে। আমাদের নিজস্ব ভাষা থাকা সত্ত্বেও নেই তাতে উচ্চ শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ফলে এ ভাষা মৌলিক ভাষা হিসেবেই বেশি প্রাধান্য পায়।

স্বাধীন দেশে আমরা পরাধীন হয়ে

বাঁচতে চাই না

মংচে চাকমা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীন দেশ, নিজের জন্মভূমি তবুও আদিবাসীদের করতে হচ্ছে অস্তিত্বের লড়াই। নিজ ভাষা ও সত্তার জন্য জীবনময় সংগ্রাম করে আসতে হচ্ছে। সীমান্ত নিকটবর্তী হওয়ায় সর্বদা সেনাবাহিনীর অধীনে থাকতে হচ্ছে, তবে কি আমরা স্বাধীন নই? স্বাধীন দেশে নেই আমাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এই দিনটি আনন্দের সঙ্গে উদযাপনের একটি দিন হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা। জাতিসংঘের ১৯৯৪ সালের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশে তা পালন করা হয় না কারণ আমাদের আদিবাসী বলে মেনে নিলে বাংলাদেশ সরকারের জাতিসংঘ প্রণীত নিয়মগুলো মানতে হবে যা সরকার মানতে নারাজ। এটি আদিবাসীদের জন্য বড় ধরনের বৈষম্য ও দুর্ভাগ্যের বিষয়। বাংলাদেশও হারাচ্ছে আদিবাসী সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যময় দেশের তকমা।

সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী

\হ

সুই পু পুক মারমা

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সামনে রেখে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংবিধানিক পরিচয় 'আদিবাসী' করার দাবি আবারও জোরালো হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশে যে যতগুলো আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আছে তারা যেন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।' ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তি হয়েছিল। এরপর ২৫ বছর কেটে গেলেও আমরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীর স্বীকৃতি পাইনি। আমাদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ধর্ম সবকিছু রয়েছে। তার পরও এদেশীয় কোনো সরকার তা মেনে নেয়নি। আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা উপজাতি বলে আখ্যায়িত করে নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত করেছে। এই ধরনের অপপ্রচারের ফলে অনেকে তর্ক করে বলে থাকেন, ওরা আদিবাসী নয়, উপজাতি। ওরা যে কী সেটা ওদেরই বলতে দিন। জোর করে কি পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া যায়? পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়। বাংলাদেশের মতো উদার গণতন্ত্রের দেশে সেটা হওয়ার কথা ছিল না।

চেতনাকে দামিয়ে রাখা সহজ নয়

লামং চাকমা

উখিয়া ডিগ্রি কলেজ

একটি জাতিকে সাময়িক থামিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু তাদের চেতনাকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বললে অনেকে গালাগাল করেন কিন্তু নিজেদের মধ্যে জাতি বিদ্বেষ পুষে রেখে কখনো অন্য জাতির পরাধীনতার কষ্ট বোঝা সহজ নয়। যে দেশের সরকাররা সাম্প্রদায়িক, গণতন্ত্রের নামে করে স্বৈরাচারী যে রাষ্ট্রের আইন প্রগতিবিরোধী, যে দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্যের ব্যবধান অনেক বেশি, মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সে দেশের সাধারণ জনগণ কতটা নির্যাতিত তা আর বলে বোঝানোর কিছু নেই। এরমধ্যে যদি আদিবাসী জনগোষ্ঠী হয় তাহলে তো কথাই নেই। প্রতিনিয়ত বাঙালি জনগোষ্ঠী আমাদের ভূমি কেড়ে নিয়ে উচ্ছেদ করছে। জোতদার, দখলদার এসব জনগণের দ্বারা এমনকি সাধারণ বাঙালি ও স্বয়ং সামরিক বাহিনী পালাক্রমে পাহাড়িদের ধর্ষণ করে যাচ্ছে। এ করুণ ইতিহাসের পাতায় কারও যেন ভুল করেও চোখ পড়ে না। আমাদের চেতনাকে সঙ্গে নিয়েই আমরা লড়ে যাচ্ছি। অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনাশাসন তুলে নিতে হবে এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে