রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ষোলো বছর পদার্পণে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

মো. মমিনুর রহমান
  ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া, দুপুরের তরু পলস্নবের সবুজ ছায়া, গোধূলিতে পাখির কিচিরমিচির এবং সন্ধ্যার পরই শিয়ালের হুক্কাহুয়া ইত্যাদি সামনে এলেই মনে পড়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। রংপুর শহরের অদূরে মডার্ন মোড়ের কোলঘেঁষে উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ড খ্যাত ৭৫ একরের জায়গাজুড়ে সবুজ ছায়া ও তরু পলস্নবে আচ্ছাদিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুর বিভাগের মানুষের দীর্ঘদিনের ফসল কেননা অনেক চড়াই-উতরাই পার করে প্রতিষ্ঠা লাভ করে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে মহীয়সী নারী, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে ২০০৯ সালে নামকরণ করা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ষোলো বছরে পদার্পণ করছে বৃক্ষের জাদুঘর খ্যাত বেরোবি। সেশনজট নিরসনের ফলে গুচ্ছপদ্ধতিতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় দেখা গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপরই বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমান উপাচার্য হাসিবুর রশীদের একাগ্রতায় এবং একনিষ্ঠ চেষ্টায় সেশনজট শূন্যে নেমে আসছে। গবেষণায়ও পিছে নেই বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমাদের রয়েছে বিশ্বসেরা গবেষক। সিমাগো র?্যাঙ্কিং-২০২৩: গবেষণায় দেশ সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ বিশ্ববিদ্যলয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য অধ্যয়নরত। দেশের সর্বস্তরের চাকরিতেও আছে এখানকার শিক্ষার্থীরা।

সবকিছু দেখে বিশ্বাসেই হবে না বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স মাত্র ষোলো বছরে পদার্পণ করেছে। অ্যাকাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি বাহ্যিক সৌন্দর্যেও ভরপুর। দেড় দশকে ৪০০ প্রজাতির বিভিন্ন তরু পলস্নব মিলে প্রায় ৩৮ হাজার গাছের সবুজের সমারোহে আচ্ছাদিত। পুরো ৭৫ একর যেন ছায়া সুনিবিড় ও শান্তির নীড়। ৬টি অনুষদ ও ২২টি বিভাগে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে ৪টি অ্যাকাডেমিক ভবন, গবেষণার জন্য ডক্টর ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং একটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য হাতের নাগালে পায় পদ্মরাগ, বায়ান্ন, এসো বিদ্রোহ করি ইত্যাদি ছাউনি। খাবারের জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট চারটি গেট রয়েছে। প্রাকৃতিক নৈসর্গের সৌন্দর্যমন্ডিত ক্যাম্পাসটি বিভিন্ন নামের মাধ্যমে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছে দারুণভাবে : যেমন ১নং প্রবেশদ্বারের গেটকে বলা হয় দেবদারু রোড। কারণ এই রাস্তার দুই দিকেই রয়েছে দেবদারু গাছ। ২নং প্রধান ফটককে কৃষ্ণচূড়া রোড বলা হয়। বসন্তকালে এই রাস্তার দুই ধারের কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুলগুলো যেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের নিজের আঁচলে আবদ্ধ রাখার জন্য নিঃস্বার্থ ও নিরহংকারীভাবে আমন্ত্রণ জানায়। ৩নং গেটকে বকুলতলা বলা হয়। ক্লাস শেষে অনেকেই জোট বেঁধে ফুলের গন্ধে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে এবং অনেকেই ফুল কুড়িয়ে বইয়ের পাতায় কিংবা পড়ার টেবিলে যত্নসহকারে রেখে দেয়।

২ ও ৩নং গেটের মাঝখানের বিশাল জায়গাজুড়ে অংশটি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং সর্বোপরি ৪নং গেটটির সংলগ্নে ভিসির বাংলো থাকায় এটি ভিসি রোড নামে পরিচিত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য জানা-অজানা জায়গা যেমন রাসেল চত্বর, স্বাধীনতা স্মারক, বিজয় সড়ক, সিঙ্গেল চত্বর, হতাশার মোড়, ট্রান্সপোর্টেশন রোড ইত্যাদি। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের জন্য রয়েছে বিতর্ক ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, গুণগুণ, রণন, ভবতরী, গ্রিন ভয়েস, ফিল্ম অ্যান্ড আর্ট সোসাইটি, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন গঠনমূলক সংগঠন এবং বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছেলেদের জন্য রয়েছে ২টি আবাসিক হল এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে ১টি। এ ছাড়া মেয়েদের জন্য শেখ হাসিনা হলের কাজ চলমান। পুরো ক্যাম্পাসের মাঝ বরাবর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক ভবন।

সব মিলিয়ে বছরের একটি দিনের জন্য অনেক উচ্ছ্বসিত দেখা যায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের। দিনটিকে মাতিয়ে তোলার জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই চলে নাচ, গান ও বক্তৃতার রিহার্সেল। রাত যায় দিন আসে, এভাবে মাহেন্দ্রক্ষণের উপস্থিতি। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা এবং জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় দিনটি। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মু্যরাল ও বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনে কেক কাটা ও আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। সূর্যের আলো নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলোকিত হয় ক্যাম্পাসটি। সবুজময় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আজ স্বপ্নে বিভোর। পড়াশোনা শেষে দেশের সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা গতিশীল রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে এবং ভবিষ্যতে বেরোবিকে আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখার মনোবাসনা গেঁথে রেখেছে অন্তরে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে