সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিপ্রবিতে কুয়াশার উঁকি

নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
  ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কুয়াশা মানেই শীত আর শীত মানেই যেন কুয়াশা!

পৌষ ও মাঘ মাসকে মূলত শীতকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় প্রকৃতিতে প্রচুর কুয়াশা হয় এবং শীতের প্রকোপ তীব্রতায় রূপ নেয়।

শীতের শুরুটা মূলত কিছুটা হেমন্তকালেই শুরু হয়। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস হেমন্তকাল। এই সময় প্রকৃতির বুকে নেমে আসে মৃদু কুয়াশা। সেই সঙ্গে হালকা শীতও অনুভূত হয়। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে যখন হালকা কুয়াশা পড়ে, দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। আরও বেশি সুন্দর লাগে যখন কুয়াশাচ্ছন্ন ফসলের মাঠে সকালের মিষ্টি রোদের আলোকচ্ছটা পড়ে। মনে হয় প্রকৃতি যেন আপন মহিমায় হাসছে।

তেমনিভাবে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে হালকা কুয়াশা। উত্তরের জনপদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় হাবিপ্রবি'র বুকে শীত একটু আগেই নেমে আসে। সন্ধ্যা হতেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। নাতিশীতোষ্ণ বলতে যে আবহাওয়া বোঝায় এইটাই যেন তার মূল সময় এবং মূল স্থান। এই সুন্দরতম আবহাওয়াকে উপভোগ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বন্ধুরা মিলে, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে বসে যায় আড্ডায়। হঠাৎ করেই কেউবা গিটারে তুলেন সুরের ঝঙ্কার। কেউ ওপাশ থেকে আবৃত্তি করে বসেন...

কোনো এক সুরেলা কণ্ঠের নারী আবার মৃদু স্বরে গেয়ে উঠেন এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি?

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। সত্যি যেন বাংলাদেশ অনেক সুন্দর। তার খানিকটা কম যায় না হাবিপ্রবি। তাই তো অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন হাবিপ্রবিতে কিছু সময়ের জন্য সুন্দর সময় কাটাতে।

বিকালে হালকা কুয়াশায় কেউবা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পেছনের কাশফুল বাগানে যান সুন্দর কিছু ছবি সময়ের সাক্ষী করে রাখতে। যখন সন্ধ্যে নেমে আসে তখন লোকগান, মুর্শিদগান ভক্তদের আসর বসে। তারা টানা দেড়-দুই ঘণ্টা গান গেয়ে পরিশ্রান্ত করে নেন ক্ষত-বিক্ষত, দরদি, সাধনায় নিমজ্জিত মনকে!

রাত কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সবাই চলে যায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন চায়ের দোকানে। সেখানে চা আড্ডা শেষ করে সবাই চলে যায় নিজ নিজ হলে বা মেসে। একদম গভীর রাতে ক্যাম্পাসের দু-একজন সিনিয়র চাদরে গা ঢেকে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাদের হতাশার গল্প শেয়ার করতে। তাদের চাকরি না হওয়া, পরিবারের হাল ধরতে না পারা, জীবনের ব্যর্থতার গল্প মৃদু কুয়াশাকে যেন ধীরে ধীরে ভারী করে তুলে। পরক্ষণেই আরেক বন্ধু আবার অন্য কিছু সিনিয়র ভাইয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, অমক ভাইদেরও প্রথমে চাকরি হয়নি, পরে তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন, কেউবা আবার হয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তাই দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। আমাদেরও একদিন ভালো কিছু হবে। হতাশা থেকে তারাই আবার খুঁজে বের করে সফলতার জয়গান।

হালকা কুয়াশায় কিছুটা শীত অনুভব হওয়ায় সবাই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমায়। ঘুমও হয় একটু যুতসই। তাই স্বভাবতই ঘুম ভাঙতেও কিছুটা বিলম্ব হয়। তাই তো ঘুম থেকে উঠে সবাই তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে যায়, কেউবা সকালের নাস্তা করে কেউবা আবার নাস্তা না করেই। কারণ ক্লাসের সময় যে অতিক্রম হওয়ার উপক্রমে। কিন্তু যারা একটু স্বাস্থ্য সচেতন বা যাদের স্বাস্থ্য কিছুটা বেড়ে গেছে তারা খুব ভোরে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হন। অবশ্য এমন মুক্ত বাতাসে হাঁটতে সবারই ভালো লাগবে। আর স্বাস্থ্য সে তো আলস্নাহর অশেষ রহমে এমনিতেই ভালো থাকবে এত সুন্দর সকালে হাঁটাহাঁটি করলে।

মস্ত বড় দালানকোঠা যেন কুয়াশাকে ভেদ করে দাঁড়িয়ে থাকে আপন মহিমায়। তার উচ্চতার মাঝে থাকে এক অন্যরকম দাম্ভিকতা। সকালের রোদের ঝিলিকগুলো যখন মস্ত দালানকোঠাতে লাগতে থাকে তখন মনে হয় যেন সুউচ্চ দালানকোঠাগুলোর অহংকারের তেজ। যা তারা কুয়াশা থাকার কারণে সকালের প্রথম ভাগে দেখাতে না পেরে শেষ সকালের দিকে দেখাচ্ছেন প্রচন্ড অহংকারের সঙ্গে। আবারও সময় গড়ায় দুপুরের দিকে কুয়াশা হয়ে যায় নিশ্চিহ্ন। সবাই এখন ব্যাপক ব্যস্ত যার যার পড়াশোনা বা ব্যক্তিগত কাজে। আবারও বিকাল আসে নেমে, আসতে থাকে মৃদু কুয়াশা, বসে সেই চিরচেনা বিকালের আড্ডা, সন্ধ্যায় লোকগান। এভাবেই চক্রাকারে চলতে থাকে হাবিপ্রবিতে কুয়াশার সঙ্গে সুন্দর দৃশ্য ও সুন্দর সময়!

আর হাবিপ্রবির এই সুন্দর দৃশ্য ও সুন্দর সময় দেখতে এবং উপভোগ করতে হলে আসতে হবে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে