রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির নেতিবাচক প্রভাব

বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ চালাতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষাগ্রহণে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করেছেন আল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
নতুনধারা
  ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পাঁচ টাকায় আর কলম পাওয়া যাচ্ছে না

আল আমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

৫ টাকার কলম কিনতে গেলে এখন আর ৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। ৬ থেকে ৭ টাকা লাগছে। যে খাতা পূর্বে ২০ টাকায় কিনতে পাওয়া যেত সে খাতা এখন ৩০ টাকা। আমাদের শিক্ষা উপকরণের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিস এই খাতা আর কলম। এই দুটি উপকরণেরও দাম বৃদ্ধি পেল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের দৈনন্দিন পড়াশোনার খরচ বহন করতে। সচরাচর একজন শিক্ষার্থী টাকা উপার্জন করে থাকে না। দুই-একটা টিউশনি করে তাদের চলতে হয়। টিউশনির বেতন বাড়ে না কিন্তু খাতা, কলম থেকে শুরু করে প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম ঠিকই বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে প্রতিটা খাবারের মূল্য। শিক্ষার্থীদের তিন বেলা খাবারের জন্য ডিম একটি প্রধান খাবার। আজকে সেই ডিমের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ হালি ডিমের দাম যেখানে পূর্বে ছিল ৩০-৩২ টাকা সেখানে বর্তমান দাম ৫০-৬০ টাকা। সুতরাং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অসহায়। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশের বেশি। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের পথটা সহজ করে তোলার জন্য মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসে সরকারের তাৎক্ষণিক কঠোর অবস্থানের প্রয়োজন। সিন্ডিকেট বন্ধে কঠোর অবস্থান, মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার পরিষদের নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ শুধু জরিমানা করেই না থেমে থেকে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, আর্থিক কাঠামোয় পরিবর্তন, অযাচিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা না ছাপানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। পদক্ষেপগুলোর সঠিক বাস্তবায়নেই আশা করি মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাবে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণে আরও আগ্রহী হবে এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সহজ, সুন্দর এবং উন্নত হবে।

শিক্ষার্থীদের নিজের খরচ নিজে বহন করতে এখন বেগ পেতে হয়

শ্রাবণী দত্ত

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনো আলোচিত সংবাদ নয়। বরং আজকাল দৈনন্দিন জীবনের সংবাদে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই হলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশোনা করছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী এখানে নিজের খরচ বহন করে তারা নিজেরাই টিউশনি কিংবা পার্ট টাইম জব করে। ফলে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে এসব শিক্ষার্থী। গত কয়েক মাস ধরে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, আটা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। থেমে নেই কাঁচা বাজারের দ্রব্যাদিও। ফলে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। টিউশনি করে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। টিউশনির বেতন বাড়েনি। অথচ প্রতিদিন তাদের খাবার, শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ এর ব্যয় বেড়েই চলেছে। গুনতে হচ্ছে অনেক টাকা। খেতে হচ্ছে হিমশিম। দৈনন্দিন জীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় সমস্যার একটি। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের মতো দরিদ্র দেশের জন্যে অতীব প্রয়োজন। অনেক সময় সরকার ভর্তুকি প্রদান করে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়াস পায়। তবে দ্রব্যমূল্যকে স্থিতিশীল রাখার কার্যকর পন্থা হলো চোরাচালানি, মজুতদারি রোধ করা এবং কঠোর হস্তে আইন প্রয়োগ করা। যেসব কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তা প্রতিরোধ করলেই আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পাব।

আর্থিক অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

রুমাইয়া আক্তার

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য মূলত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের সমতুল্য। চলতি বছরে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই টিউশন ফি ১০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরসহ অন্যান্য প্রধান শহর এমনকি মফস্বল এলাকাগুলোতেও বাড়ি ভাড়া বা মেস ভাড়া ৫০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে একজন শিক্ষার্থীর ক্যান্টিনে সকালের নাস্তায় যেখানে ১৮ টাকা খরচ হতো সেখানে এখন ২৩ টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতিটি খাবারের মূল্যই ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক পেস্নট খিচুড়ি যেখানে ছিল ৩৫ টাকা তা এখন ৪৫ টাকা। ক্যাম্পাসের ভিতরে রিকশা ভাড়া ২০ টাকা থেকে পদোন্নতি পেয়ে ৩০-৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সবকিছুর মূল্য এবং ব্যয়ের ঊর্ধ্ব পদোন্নতির দরুণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমান তালে অবনতি হচ্ছে যা পরিবারের ওপরও আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই আর্থিক চাপ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতাকেও বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। যার ফলে একাডেমিক কর্মক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি করতে পারে। শিক্ষার্থীদের ওপর মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করার জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নীতিনির্ধারকরা আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, ফ্রি টিউশন বাস্তবায়ন, আরও সাশ্রয়ী মূল্যের কোর্স উপকরণ প্রদান এবং আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা খরচ মোকাবিলার মতো বিকল্পগুলো অন্বেষণ করতে পারেন। উপরন্তু, শিক্ষার্থীরা তাদের খরচ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য আর্থিক পরামর্শ, বৃত্তি, খন্ডকালীন কাজের সুযোগ এবং বাজেটের কৌশলগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাতে পারে।

হলের ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের বেহাল দশা

শারমিন সুলতানা

শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছি তাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের ন্যায়। সীমিত মাসের খরচ মাসের ২০-২২ তারিখেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, বাকি ৮-১০ দিন চলার জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে, ধার করতে হচ্ছে। ডিম থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের দাম সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে, মাছ-মাংস কেনা যেন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীগুলো মারাত্মক মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছে। হলের ক্যান্টিনের খাবারের দামও সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই নিয়ে কথা হলে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ জানান, চাল, ডাল, ডিম, সবজি ইত্যাদির দাম বাড়ার কারণে খাবারের দামও বাড়ানো হয়েছে। ৩০ টাকার খাবার এখন ৫০ টাকায় খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে মধ্যবিত্তের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনকে অনুরোধ করছি আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নতুবা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে।

শিক্ষাসামগ্রীর দাম এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে

শামীম

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

লাগামহীন ঘোড়া যখন ছুটতে থাকে, তাকে ধরার সাধ্য কার? বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন লাগামহীন ঘোড়ার রূপ নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে শিক্ষাসামগ্রী প্রায় সবকিছুই ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী খাদ্য চাহিদা পূরণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হল বা মেসগুলোতে মিল রেট আগের থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিমের কথা উঠলেই এখন তো ঈশপের গল্পের ডিমপাড়া হাঁসের কথা মনে পড়ে। মেসের শিক্ষার্থীদের জন্য যে ডিম ছিল জাতীয় খাবারের মতো সেই ডিম এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসতেছি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ জোগান দেওয়াটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যে অনুপাতে বইয়ের দাম বাড়তেছে তাতে শিক্ষার্থীরা বই কেনার পরিবর্তে পিডিএফ বা শিটের ওপর নির্ভর করছে। যা খুবই হতাশজনক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে প্রভাব ফেললে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষা গ্রহণ করাটা মানুষের কাছে বিলাসিতায় পরিণত হবে।

পড়াশোনা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে

লিপি আক্তার সূচনা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্রব্যের লাগামহীন ঘোড়ার মতো অবিরাম বেড়েই চলেছে দ্রব্যের দাম! কেউ নেই আটকানোর! দোটানায় পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পড়াশোনা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। যারা দূর-দূরান্ত থেকে পড়াশোনা করতে আসে, স্বল্প আয়ের সীমিত বাজেটে যাদের পুরো মাস চালিয়ে নিতে হয়, তারাই হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। খাবার ঠিক মতো কিনতে পারছে না। আগে যে জিনিস কম দামে ছিল তা দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতার কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে নিম্ন মানের খাবার খেয়ে দিন অতিক্রম করছে শিক্ষার্থীরা, যার দরুণ সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। পড়াশোনার স্টেশনারি জিনিসপত্রেরও বেড়েছে দ্বিগুণ দাম। বেড়েছে খাতা এবং কলমের দাম! সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন এভাবে লাগামহীন চলতে থাকলে কি হবে দেশের খেটে খাওয়া দিন মজুরের ছেলে সন্তানের, যারা অদূর স্বপ্ন নিয়ে জীবন গড়তে আসে! কোনোভাবেই কি আটকানো যায় না এ

দ্রব্যমূল্যের প্রভাব!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে