রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিতে ঢাবির বিশেষ সমাবর্তন

মো. জাহানুর ইসলাম
  ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অসুস্থতাজনিত কারণে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের অনুপস্থিতিতে অনুমতি সাপেক্ষে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ সৃষ্টির রূপকার ও স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদানের নিমিত্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তনে অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস আগে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সাবেক রুমমেট স্নেহভাজন মঞ্জুরুল ইসলাম রনির সহযোগিতায় নাম নিবন্ধন করি। নিবন্ধন করার পর থেকেই শুরু হয় সেই বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা। এক দিন-দুই দিন করে সময় অতিবাহিত হতে হতে চলে আসে ২৪ অক্টোবর। এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে পূর্বেই আবেদনকৃত আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করি। আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে সাক্ষাৎ হয় শ্রদ্ধাভাজন মাজেদুল হক, আলী আকবর ও শাহীন মাতব্বর ভাইয়াদের সঙ্গে। উনারাও আমার মতোই আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। সমাবর্তনে অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে একটি পরিকল্পনা তৈরি করি। মূলত সেদিন থেকেই হৃদয়ে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে থাকে। এই ভালোলাগার অনুভূতি অনুভব করতে করতে পরবর্তী চার দিন যে কীভাবে নিমিষেই শেষ হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি। ২৯ অক্টোবর ভোর রাত থেকেই হৃদয়ে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা অনুভব করি। প্রতু্যষের দুর্বার ডগায় চিকচিক করা কুয়াশা কণা শুকিয়ে যেতে না যেতেই মুন্সীগঞ্জ থেকে ক্যাম্পাসে এসে মঞ্জুরুল ইসলাম রনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে সকালের নাস্তা শেষ করে দু'জন একসঙ্গে পদব্রজে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করি। আমাদের সঙ্গে যোগ দেন স্নেহভাজন তিতুমীরও।

সকাল সাড়ে ৯টার কিছু পরে আমরা সমাবর্তন স্থলে পৌঁছাই। মূল এরিনায় প্রবেশের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট বাকীবিলস্নাহ ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, এরপর একে একে দেখা হয় মাজেদুল হক ভাই, আলী আকবর ভাই, শাহীন মাতব্বর ভাইসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে। মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা নিজেদের একফ্রেমে ক্যামেরাবন্দি করি। সেখানে আরও কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পর দলবদ্ধভাবে সুইমিংপুল সংলগ্ন গেট ব্যবহার করে নিরাপত্তা চেকিং সম্পন্ন করে সমাবর্তন স্থলের মূল এরিনায় প্রবেশ করি। মূল এরিনার ভিতরে সাক্ষাৎ হয় সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান নোবিপ্রবির শিক্ষক সৈয়দ মুহাম্মদ সিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপের বর্তমান সিনিয়র রোভার মেহেদী হাসান, রোভার মেট সারতাজ, জুয়েলসহ পরিচিত অনেকের সঙ্গে। মূল এরিনার সাজানো গুছানো পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করে। নিজেদের পছন্দ মতো আসন গ্রহণ করি। সেই সঙ্গে গ্রহণ করি আসনে আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা উপহারসামগ্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকেই উপহার হিসেবে একটি সুভেনির, একটা ক্রেস্ট, একটি কোটপিন এবং একটা কাগজের ব্যাগ প্রদান করা হয়।

বেলা ১১টার কয়েক মিনিট পরে অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একে একে বক্তব্য প্রদান করেন নির্ধারিত আমন্ত্রিত অতিথিরা। সময় আপন গতিতে ছুটে চলে। একটা সময় বক্তৃতা মঞ্চে উপস্থিত হোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও সমাবর্তন বক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবর্তন বক্তার কথা শোনার জন্য অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে আবেগমাখা কণ্ঠে উপস্থিত অতিথিদের শোনান বঙ্গবন্ধু ও তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানান স্মৃতি। তার বক্তব্য শুনে উপস্থিত অতিথিরা মুগ্ধ হোন। সমাবর্তন বক্তা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে উপদেশ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন। অনুষ্ঠানের একফাঁকে অংশ নেওয়া দর্শন বিভাগের ২য় ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন মাতাব্বর ভাইয়ের কাছে বিশেষ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ২০১২ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই সময় আয়োজিত নিয়মিত সমাবর্তনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে সমাবর্তনে কী হয় সে সম্পর্কে তার জানা ছিল না। মূলত সমাবর্তন সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেতে এবং বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানজনক ডিগ্রি ডক্টর অব লজ প্রদানের লক্ষ্যে আয়োজিত ঐতিহাসিক সমাবর্তনের অংশ হতে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি। তার পাশে উপবিষ্ট ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মাজেদুল হক বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হওয়ায় যে বিশ্ববিদ্যালয় একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহিষ্কার করেছিল, আজ সেই একই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বিশেষভাবে সম্মান জানাচ্ছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দারুণ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে ভালো লাগছে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ও সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হতে সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা শেষ করেন, তখন ঘণ্টার কাঁটা ২টার ঘর অতিক্রম করেছে। দুপুরের খাবারের সময় হওয়ায় অনুষ্ঠানের সভাপতি আর কালক্ষেপণ না করে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি শোষণা করেন। আর এর মধ্যে দিয়েই বিশেষ সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে আমরা যে যার মতো গন্তব্যস্থলে ফিরে যাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে