সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের কৃষি খামারে একদিন

মো. লিখন ইসলাম
  ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বাংলাদেশের মধ্যে বিশেষায়িত কৃষি বিষয়ক ডিগ্রি প্রদানকারী অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকৃবি শিক্ষা কারিকুলামে তাত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে-কলমে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে যে বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ উপলব্ধি করতে পারে। এজন্য কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে ব্যবহারিক ক্লাস, ল্যাব এবং মাঠ পর্যায়ের কাজ। 

সম্প্র্রতি আমরা বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্যারাসাইটোলজির (পরজীবীবিদ্যা) হেলমেন্থোলজি (কৃমি ও কৃমিঘটিত রোগ) কোর্সের অংশ হিসেবে শিক্ষা সফরে ৩টি কৃষিখামার ভ্রমণ করি। যেখানে আমরা লেয়ার মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন পদ্ধতি হাতে-কলমে দেখি। শিক্ষা সফরটি আয়োজন করে বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগ।

শরৎ এর কাশফুলের মতো শুভ্র আকাশের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে আমরা দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করি কৃষিখামার ভ্রমণের জন্য। বাকৃবি ক্যাম্পাস থেকে ৪টি বাসে করে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ময়মনসিংহ বিভাগের ভালুকা উপজেলায় অবস্থিত জম জম এগ্রো খামার, সততা এগ্রো খামার এবং উসামা এগ্রো খামারের উদ্দেশে। 

গন্তব্য বেশি দূরে নয়, অল্প সময়ের যাত্রা তবুও বাসের মধ্যে হই-হুলেস্নার, নাচানাচি, খুনসুটি করে কেটে যায় পুরোটা সময়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই ত্রিশাল উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। সেখানে কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বাকৃবির সাবেক শিক্ষার্থী ডা. তানজিলা ফেরদৌসী আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর আমাদের আবার যাত্রা শুরু হয় সততা ও জম জম কৃষিখামারের উদ্দেশে।

জম জম কৃষিখামারটি মূলত একটি লেয়ার মুরগি খামার। এখানে মুরগি পালন করা হয় ডিম উৎপাদন করার লক্ষ্যে। প্রায় ৬ বিঘা জমির ওপর খামারটি গড়ে তোলা হয়। খামারে বর্তমানে প্রায় ২২০০টি ডিম প্রদানকারী মুরগি এবং আরও ২৩০০টি মুরগি রয়েছে যারা এখনো ডিম প্রদান শুরু করেনি। খাঁচা সিস্টেমে মুরগিগুলো পালন করা হয়। প্রতিটি খাঁচায় ৩টি করে মুরগি রাখা হয়েছিল। পরজীবী ঘটিত রোগ ও বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ এড়াতে খাঁচাগুলো মাটি থেকে কিছুটা উপরে নির্মাণ করা হয়। এই মুরগিগুলোকে খাঁচার মধ্যেই খাবার ও পানি দেওয়া হয় ও নির্দিষ্ট সময়ে ভ্যাকসিনসহ কৃমিনাশক প্রদান করা হয়। প্রতিদিন এই খামার থেকে প্রায় ১৮০০ ডিম উৎপাদিত হয়।

এরপরে আমাদের পরের গন্তব্য ছিল উসামা বিন সারয়ার সাহেবের বিখ্যাত কৃষিখামার উসামা কৃষিখামার। 

একটা ছোট্ট নান্দনিক পার্কের আদলে গড়ে তোলা হয় খামারটি। একটা বড় পুকুর, পুকুরের পাশে নান্দনিক বসার জায়গা, একটা নান্দনিক কারুকার্য খচিত ও নানা ধরনের আলোকসজ্জায় সজ্জিত বিশাল বহুল অতিথিশালা রয়েছে এখানে। এই পুকুর পারে আমাদের সবার জন্য বসার জায়গা বানানো হয় এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। তার নিজস্ব খামারের উৎপাদিত গরুর দুধের সুস্বাদু পায়েস খেতে দেওয়া হয় আমাদের। আমরা সবাই তার আতিথীয়তায় মুগ্ধ হই। 

উসামা বিন সারয়ার নিজের শখ থেকেই মূলত ২০১৪ সালে গড়ে তোলেন এই খামার। তিন একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এটি। মূলত গরু, ছাগল ও ভেড়া উৎপাদন করা হয় এখানে, যা কোরবানির সময় বাজারজাত করা হয়। এছাড়াও গরু পালন করা হয় দুধ উৎপাদন করার জন্য। হলিস্টান ফ্রিজিয়ান, দেশি, ব্রাহামা ক্রস, শাহীওয়াল, গীর, ইন্দ-ব্রাজিল ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করে থাকেন। এদের লালন-পালনে নিজেদের উৎপাদিত অর্গানিক খাবার খাওয়ানো হয়। কৃমিনাশক তিন মাস পর পর প্রদান করা হয় এবং নিয়মিত ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়।

বর্তমানে খামারে গরু আছে ২২০টি, ছাগল আছে ৫০টি, ভেড়া আছে ১৬টি। এক-একটি গরুর ওজন মৌসুমে ৮০০-৯০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোরবানির মৌসুমে বছরে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০টির মতো পশু। খামারের ম্যানেজার বলেন, আমরা লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আনন্দ ভাগাভাগির জন্যই পশুপালন করি।

বিকালে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কুইজ প্রতিযোগিতা। বন্ধু সিফাতের উপস্থাপনায় প্যারাসাইটোলজি কোর্স থেকে বিভিন্ন মজার মজার প্রশ্ন করা হয় সবার উদ্দেশে এবং সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটাই ছিল এই শিক্ষা সফরের সব থেকে মজার অংশ। এর পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, কৌতুক ইত্যাদি পরিবেশন করেন আমাদের বন্ধু-বান্ধবীরা। ত্রিশাল উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন সুন্দর সুন্দর গান পরিবেশন করেন। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি দিন অতিবাহিত করি আমরা। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে