সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

বিনয়ী মা রাজহাঁস

তারিকুল ইসলাম সুমন
  ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মা রাজহাঁসের ছয়টি ছানা। তুলতুলে দুলদুলে একেকটি ছানা। কার্পাসের তুলোর মতো পশমে ঢাকা ওদের শরীর। সকালে মা-বাবার সঙ্গে খাঁচা থেকে বের হয় ছানাগুলো, তারপর এগিয়ে যায় পুকুরপাড়ে। পুকুরপাড়ের নরম ঘাসগুলো কী সুন্দর! যাওয়ার সময় এক সারিতে হেঁটে যায় সবাই। একেবারে সামনে থাকে বাবা আর পেছনে মা রাজহাঁস। সকালে ওদের হেলেদুলে হেঁটে যাওয়া দেখে আম গাছে বসে থাকা কাক, ঝিঙে মাচার ফিঙে আর ডালিম গাছের টোনাটুনি। সত্যিই রাজহাঁসের ছানাগুলো খুব সুন্দর, একেবারে যেন মায়ের চেহারা পেয়েছে!

দিন পনেরো পার হয়েছে। ছানাদের শরীরের পশম এখন অনেকটা সাদা হয়ে উঠেছে। বাবা-মায়ের দেখাদেখি ছানাগুলো পুকুরপাড়ের সবুজ ঘাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। ছোট্ট শামুক পেলে মা রাজহাঁস প্যাকপ্যাক করে ডাক দেয়, একসঙ্গে হামলে পড়ে সব ছানা। নিজেদের মাঝে সামান্য ঝগড়া হলেই এগিয়ে আসে বাবা। বাবা বোঝান, একে-অপরে ঝগড়া করা কখনোই ভালো নয়।

চলতে-ফিরতে প্রতিদিন অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়। পাতিহাঁসের ঝাঁকের সঙ্গে, অসংখ্য মোরগ-মুরগির সঙ্গে, চিনা হাঁস আর তিতিরের সঙ্গেও। এতদিনে একটা বিষয় খেয়াল করেছে ছানাগুলো, লাল মুরগিটার সঙ্গে দেখা হলেই তাদের মা কেমন খুশিতে আটখানা হয়ে যান। একটু এগিয়ে যান, কি যেন বলেন। মুরগিটাও ঠোঁট দিয়ে টুপটুপ করে খানিকটা আদর করে, মা রাজহাঁস ফিরে আসেন মাথা নিচু করে। বাবাও দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন বিষয়টি, কিছুই বলেন না। বাবাও যেন শ্রদ্ধা করে লাল মুরগিটিকে।

আরও কিছুদিন পরের কথা। প্রতিদিনের মতো মা ও বাবা রাজহাঁস ওদের কাছে ছিল না। দিন দিন ছানারা এখন বড় হচ্ছে না! আজ লাল মুরগিটার সঙ্গে দেখা হতেই কাছে ডাকল ছানাদের। বলল, কেমন আছ, আমার আদরের নাতিনাতনিরা। বাবা-মা ছাড়া সব কোথায় চলেল এই ভর দুপুরে? বলি বেশি দূরে কোথাও যেও না, ওপাশের ডোবায় আজকাল কয়েকটি সোনাগুই ঘুরঘুর করে। তোমাদের মা- মানে আমার মেয়েটাকে বিকালে দেখা করতে বলবে, জরুরি কিছু কথা আছে। হঁ্যা, আমি ওই উঁচু ঢিবিটার পাশেই থাকব।

খুব আশ্চর্য হয়ে মাথা নেড়ে ফিরে গেল ছানাগুলো। কেউ বুঝে উঠতে পারছে না, তাদের মা কেন মুরগিটির মেয়ে হতে যাবে? রাজহাঁসের মা হবে একটা মুরগি? কী আশ্চর্য!

ঝিমধরা দুপুরে শিউলি তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল মা ও বাবা রাজহাঁস। মায়ের কাছে আসতেই যেন আর তর সইল না। মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করল বড়ো ছানাটি- আচ্ছা মা, ওই লাল মুরগিটি কেন তোমাকে মেয়ে বলে ডাকছে? সে কেন তোমার মা হতে যাবে?

এবার প্যাকপ্যাক করে হেসে উঠল মা রাজহাঁস, আরে আমার আদুরে ছেলেমেয়েরা। তোমাদের তো বলাই হয়নি, উনিই আমার মা। উনার বুকের উম পেয়েই ডিম থেকে ছানা ফুটে বের হয়েছিলাম আমি, এই তোমাদের মা, বুঝলে? এই বাড়ির মালিক সে বার ছয়টি রাজহাঁসের ডিম তায়ে বসিয়েছিলেন। মা মুরগি তখন নিজের ডিম মনে করে ছানা ফোটালেন। ছানা ফুটে বের হয়েছিলাম আমরা এক একটা রাজহাঁসের বাচ্চা। নিজের প্রজাতি না হলেও তিনি আমাদের বড় করেছিলেন মায়ের মমতা দিয়ে। খুঁটে খাওয়া পর্যন্ত আমাদের রেখেছিলেন চোখচোখে। তোমরাই বলো, মা'কে ভালোবাসা ছাড়া ভালো থাকা যায়? মাকে তাই ভালোবাসতেই হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে