সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার রানী কেয়া

সাকী মাহবুব
  ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। বাঙালির অতিপরিচিত ও ভালোবাসার একটি ফল কেয়া। বাংলায় জনপ্রিয় একটি প্রবাদ আছে, কেয়া না ফুটলে কী বর্ষা হয়, এই প্রবাদের গুণে কেয়াকে সাধারণত বর্ষার ফুল বলা হয়। তবে অনেকে আবার এ ফুলকে বর্ষার রানী বলেও জানেন।

আবহমানকাল ধরে বাংলায় কেয়া ফুলের সুগন্ধের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে। বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কেয়া ফুলের আধিপত্য। কেয়ার প্রেমে মজেছেন নোবেলজয়ী কবি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। তিনি লিখেছেন

'তোমার ফাগুন দিনের বকুল চাঁপা

শ্রাবণ দিনের কেয়া।'

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কেয়াকে নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন

'রিমি ঝিম রিমি ঝিম ঐ নামিল দেয়া।

শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া।'

সংস্কৃতিতে কেয়ার নাম কোর্তাক, হিন্দিতে কেওড়া, ইংরেজি নাম ংপৎবি ৎরহব. বৈজ্ঞানিক নাম ঢ়ধহধফধহঁং ঋধংপরপঁষধৎরং. কেয়া গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। লম্বায় ৩-৪ মিটার হয়ে থাকে। কান্ড গোলাকার ও কাঁটাযুক্ত। কান্ড থেকে শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ঝোপাল হয়ে যায়। পাতাও লম্বায় ৩-৪ মিটার লম্বা। চওড়া ৫-৬ সেন্টিমিটার। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে ফুটতে শুরু করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস জুড়ে কেয়া ফুল ফোটে। নোনাপানির ধার ঘেঁষে শ্বাসমূলে ঠেস দিয়ে যূথবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে কেয়া গাছ। সেন্টমার্টিন, সুন্দরবনে দেখা মেলে কেয়াবনের। নোনাজল না পেলেও বড় ক্ষতি নেই, নদীনালা খালবিলের জলকাদায়ও নিজেকে মানিয়ে নেয় বেশ।

এর ফুলের রং সাদা এবং গন্ধ গভীর ও মাদকতাপূর্ণ। এ গাছের ফুল থেকে সুগন্ধি তেল তৈরি করা হয় যা কেওড়া তেল নামে পরিচিত। কেয়ার ফলও হয়। দেখতে আনারসের মতো। ভারত, প্যাসিফিক আইল্যান্ডস, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, জাপান এবং আমাদের বা্‌ংলাদেশে পাওয়া যায়। এই গাছগুলো পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে নিবিড় এক মনোরম পরিবেশ তৈরি করে।

প্রাচীনকাল থেকে কেয়া ফুল সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঠিক তেমনি ভোজন রসিকদের রসনবিলাসেও রেখেছে বিরাট ভূমিকা। কেওড়ার জল ছাড়া বিরিয়ানি পোলাও যেমন ঠিক জমে না, ঠিক তেমনি কেক, মিষ্টি, পায়েস রান্নায়ও কেওড়ার এসেন্স নিয়ে আসে ভিন্ন মাত্রা।

দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নদী বা সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে কেয়াবন। যা মাটির ক্ষয়রোধ করে এবং ঝড়ঝাপটা থেকে উপকূলের জনপদকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে। সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা বাগানে ও টবে কেয়াগাছ লাগাতে পারেন। বর্ষায় মিলবে কেয়াফুলের মনকাড়া মিষ্টি সুগন্ধ আর সারাবছর পাওয়া যাবে সুদৃশ্য বাহারি পাতা। গ্রামের মেয়েরা সৌন্দর্য চর্চায়

এই ফুল অলংকার হিসেবে ব্যবহার করে। তাইতো হিয়া মোর গুমরিয়ে কাঁদে কেয়া সনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে