সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাছেরও প্রাণ আছে

মনিরা পারভীন
  ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

প্র চন্ড ঝড়। ঘন কালো রাত। গাছরা হেলে-দুলে উঃ আঃ করছে। একটা আরেকটার গায়ে পড়ছে। কোনো গাছ বলছে, এ কী ভয়ংকর ঝড়! শেকড় যেন উপরে যাচ্ছে। বাঁচাও, বাঁচাও! কয়েকটা গাছের ডাল মট মট মরে ভেঙে গেল। কোনো কোনো গাছের শেকড় উপড়ে গেল। কয়েক ঘণ্টা পর পরিবেশ স্বাভাবিক হলো।

ভোরের সোনালি রোদে গাছরা সতেজ হলো। প্রতিবেশী বৃক্ষরা এমন করুণ পরিণতি দেখে কান্না করল। চারাগাছগুলো ভয় পেল। বাকি গাছরা সাহস দিয়ে বলল, ভয় নেই। আমরা দেখ টিকে আছি। তোমরাও পারবে। বেশ কিছুদিন গেল চারাগাছগুলো দ্রম্নত বেড়ে উঠতে লাগল।

গাছরা বেশ নিরাপদে দিন কাটাতে লাগল। পাখিরা বাসা বানাতে লাগল। ছানা ফোটাল। পশুরা আগের মতো বনে বনে ঘুরে বেড়াতে লাগল। মনের আনন্দে শিকার করে দিন যাপন করতে লাগল। হঠাৎ একদল দসু্যবাহিনী বনের আশপাশে এলো। আস্তানা গড়ে তুলল। গাছরা বলাবলি করতে লাগল, এরা কী চায়? কেউ বলল, ওদের হয়তো থাকার জায়গা নেই। কেউ বলল, মনে হয় কিছু আবিষ্কার করতে এসেছে। কারও কারও মনে সন্দেহ হলো। কারণ দসু্যগুলোর সঙ্গে গাছ কাটার যন্ত্র। নিশ্চয়ই এদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।

ঠিক তাই। একে একে গাছ কাটা শুরু হলো। বৃদ্ধ বৃক্ষগুলো কান্না করতে লাগল। এভাবে কেটো না মানুষ। আমরা তো শত বছর ধরে তোমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ছায়া দিচ্ছি। ফুল-ফল দিচ্ছি। ঝড়ঝাঁপটা সামলে নিচ্ছি। অক্সিজেন দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করছি। পরিবেশের তাপমাত্রা ঠিক রাখছি। কত প্রাণী আশ্রয় নিচ্ছে ডালে, বাসা বানাচ্ছে। গাছের ফল খেয়ে বেঁচে আছে। বলো মানুষ, কী ক্ষতি করেছি তোমাদের? কেন কেটে ফেলছ? অনেক মানুষ শাখা-প্রশাখা কেটে জ্বালানি করছে। ঘরের ফার্নিচার করতে আমাদের কেটে ফেলছে কখনো। প্রয়োজনে ব্যবহার করছ ঠিকই আবার চারা রোপণ করতে দেখেছি। কিন্তু তোমরা কোন নিষ্ঠুর মানুষ! এভাবে উজার করে ফেলছ কেন? এতে যে তোমাদেরই ক্ষতি। কেন বোকার মতো কাজ করছ? দয়া কর। এমন ভুল করো না। বিপদে পড়বে। কিন্তু দসু্যবাহিনী কোনো কথা শুনল না। একমাস অবস্থান করে শত শত গাছ কেটে ফেলল। গাছেদের কান্না আর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল। বজ্রপাতে মারা গেল এক দসু্য। বনের ভেতরে এক বিভৎস শব্দ হুঙ্কার দিয়ে উঠল। দসু্যবাহিনী ভয় পেয়ে গেল। তাবুর ভেতর থেকে সবাই বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে পড়ল। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কথা বলল। কে, কে? চিৎকার করল। কার পায়ের আওয়াজ? সাহস থাকে তো সামনে আস। দসু্যবাহিনী বলল।

চারপাশ রুপালি আলো ছড়িয়ে এক পরি উপস্থিত হলো। তারা অবাক হয়ে চেয়ে রইল। বলল, কে তুমি?

-আমি বন পরি। তোমাদের অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এত অন্যায় করছ যে বিবেক অন্ধ হয়ে গেছে তোমাদের। এভাবে গাছগুলোকে কষ্ট দিচ্ছ?

দসু্যবাহিনীর ভয় পেলেও সাহস করে একজন বলল, এ কেমন কথা বন পরি! গাছ কখনো কষ্ট পায়?

দসু্যবাহিনী তাদের দেয়া কথামতো কাজে লেগে গেল। সবুজ সতেজ হয়ে উঠল চারপাশ।

-দসু্যদের অনেকে মুচকি মুচকি হাসে। ভাবে, কী সব বলছে! কেউ বিশ্বাস করে বন রানী ঠিকই বলেছে। অবশেষে দসু্যবাহিনীর সর্দার ক্ষমা চেয়ে বলল, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটব না। পারলে সবাই গাছ লাগাব। গাছের প্রয়োজনীয়তা সবাইকে জানাব। এবারের মতো আমাদের ক্ষমা করে দাও বন রানী।

-- বন রানী খুব খুশি হলেন। তিনি বললেন, ওহে! মানব, ক্ষমা করতে পারি। যদি আমার একটা শর্তে রাজি হও।

-- বলুন বন রানী। সমস্বরে সবাই বলে উঠল।

-- কালকেই সবার বাড়িতে দুটো করে গাছ লাগাবে। তারপর এই বাগানে যতগুলো গাছ কেটেছ ততগুলো গাছ লাগিয়ে বড় হতে সাহায্য করবে। প্রতি বছর জুন মাসের ৫ তারিখ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে মানুষ। কিন্তু ক'জন আর গাছ লাগায় বলো? আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বৃক্ষপ্রেমি হয়ে উঠতে হবে। গাছ লাগানোর মধ্য দিয়েই মুক্তি পাবে।

- জ্বী হুকুম রানী (সবাই নম্র হয়ে বলল)।

বন রানী নিমিষেই ভ্যানিস হয়ে গেল।

- হঁ্যা, পায়। তোমরা দেখি খুবই অজ্ঞ মানব। এক মানব সন্তান নাম তার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী। উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার করেছিলেন। সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, জীবদেহের মতো বৃক্ষেরও প্রাণ আছে। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন উদ্ভিদও তাপ, শীত, আলো, শব্দ ও অন্যান্য অনেক বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। গাছেরও ফুল হয়, ফল হয়। গাছরাও বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তোমরা ওদের কষ্ট বুঝতে পার না। অনুভূতি দেখা যায় না। উপলব্ধি করতে হয়, বুঝেছ?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে