সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

শেয়ালের বোকামি

মো. আল মামুন হোসেন
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সীমান্তবর্তী এলাকা রাজারবাগের পাশেই বড় একটি বন। বনে নানান পশুপাখির বসবাস ছিল। বনটিতে কয়েকবার দাবানলের (আগুন লাগার) কারণে বন এখন শূন্য প্রায়। যতটুকু জঙ্গল এখনো রয়ে গেছে সেখানেই নানা প্রকার পশুপাখি বসবাস করে। বন উজাড় হওয়ায় পর্যাপ্ত ফলমূলের গাছগাছালি না থাকায় খাবারের অভাবে পশুপাখি অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে। যা কিছু প্রাণী এখনো আছে- তাদের কৌশলে, যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। একদিন ক্ষুধার তাড়নায় খাবারের উদ্দেশ্যে শেয়াল দলবেঁধে সারা বন খুঁজে বেড়াল। কিন্তু কোথাও খাবার পেল না। ক্ষুধার তাড়নায় শেয়ালরা হন্যে হয়ে ঘুরতে লাগল। ক্ষুধার্ত শেয়ালগুলো ঘুরতে ঘুরতে একপর্যায়ে দেখলো দূরের একটা গাছে দুটি বানর ছানা ফল পাড়ছে। দেখলো গাছ থেকে ফল পেড়ে পেড়ে তারা নিচে রাখছে। ফলগুলো নিচে রেখে বানর ছানা দুটি অন্য একটি গাছে উঠে ফল পাড়া শুরু করে। দুটি শেয়াল সুযোগ বুঝে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল গাছের নিচে। চুপেচুপে ফলমূলগুলো নিয়ে আবার দল বেঁধে নিজেদের আস্তানায় ফিরে যেতে শুরু করে। বানর ছানা দুটি গাছের নিচে এসে দেখে সেখানে ফল নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে একঝাঁক শেয়াল দেখতে পেল। বুঝতে পারল তারাই তাদের ফলগুলো চুরি করেছে। কিন্তু তাদের কাছে এগিয়ে যাওয়ার সাহস হলো না, কারণ তারা ছিল দলে অনেক। বানররা বুঝতে পারে বনের অন্য কোথাও আর ফলমূল কিংবা অন্য কোনো খাদ্য নেই। শেয়ালরা নিশ্চয়ই ক্ষুধা পেলে আবারও এখানে আসবে। সেজন্য বানর ছানা দুটি বনের সব বানরকে বিষয়টি জানায় শেয়ালদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে। খাবারের ভাগাভাগি নিয়ে শেয়ালদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায় পরদিন শেয়ালদের মাতব্বর কুট্টুস বুদ্ধি করে একাই যাবে খাবার আনতে। কারণ দলবেঁধে গেলে যে খাবার পায় তাতে তার পোষায় না। কুট্টুস ভাবে ছোটছোট বানর ছানারা তাকে কিছুই করতে পারবে না। সেজন্য সে একাই যায় খাবার খাওয়ার লোভে। বানর ছানাদের গাছে ফলমূল পাড়তে না দেখে তাদের আস্তানায় যায়। সব বানর গাছের উপর থেকে বিষয়টি খেয়াল করছিল। বানররা দেখল শেয়ালটি শুধু একা এসেছে। যার ফলে তাকে ধরাটা সহজ হয়ে যায় তাদের জন্য। যেই না শেয়ালটি খাবারের লোভে বাসার মধ্যে ঢুকলো, বানররা দরজার সঙ্গে বুদ্ধি করে আগেই সুতাবেঁধে রাখছিল। সেটা টান দিয়ে বন্ধ করে দিল। তারপরে শেয়ালটিকে আটকে রাখে দিনের পর দিন। অন্য শেয়ালগুলোও তাকে আর খুঁজতে আসেনি, তাদের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি হওয়ায়। দিনের পর দিন এভাবে না খেয়ে একদিন শেয়ালটি ক্ষুধার অভাবে মারাই গেল। এভাবেই শেয়ালটির বোকামির কারণে নিজের জীবন চলে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে