সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

জাদুর কাঠি উড়ে যায়

মো. আশতাব হোসেন
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ঘুরংফুরং নামের এক লোক বাস করত ধরলা নদীতে জেগে উঠা ট্যাপার চরে। তার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল জাদুবিদ্যা শিখবে। তাই সে একদিন সবার কাছে বলে চলে যায় দমহর নামে এক জাদুর দেশে। সেখানে গিয়ে জাদুমহারাজের কাছে তার ইচ্ছার কথা খুলে বলে। জাদুমহারাজ বলে ঠিক আছে সব ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে ঘুরংফুরংকে নিয়মিত জাদু শেখাতে থাকে। দীর্ঘ ছয় মাস জাদু শেখানোর পর জাদুমহারাজ সবার মতোই ঘুরংফুরংকে পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় ঘুরংফুরং সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। জাদুমহারাজ জামরুল গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি করা এক জাদুর কাঠি সার্টিফিকেট হিসেবে ঘুরংফুরংয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলে এটাই তোমার সনদ। এখন থেকে তুমি হলে জাদুরাজ। তবে কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি করবে না। মানুষের ক্ষতি করলে জাদু ও জাদুর কাঠির ক্ষমতা সব নষ্ট হয়ে যাবে। তোমার বয়স কম, এমন বয়সের মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হয় না। কারণ তাদের রাগ ও জেদ বেশি। তারা বেশি কৌতূহলী হয়ে মানুষের ক্ষতি করে ফেলে। তোমাকে দেখে এবং তোমার নরম সুরের কথা শুনে তোমার প্রতি আমার মায়া জাগে- তাই তোমাকে সব শেখালাম। এই বলে জাদুর কাঠি পরিচালনা করার জন্য একটি মন্ত্র শিখিয়ে দেয়-

যারে কাঠি উড়ে যা

গিয়ে শত্রম্নর শক্তি খা,

দুষ্ট জিন ভূত সব ধরে

নিয়ে আসবি এই চরে।

এই মন্ত্র শিখে ঘুরংফুরং জাদুর কাঠি নিয়ে ট্যাপার চরে ফিরে এসে চিকিৎসার কাজ শুরু করে দেয়। কেউ ভূতে ধরা রোগী কিংবা কেউকে বদ জিনে ধরা রোগী নিয়ে আসতে থাকে জাদুরাজের কাছে। সব রোগীর চিকিৎসা করে ভালো করে দেয় জাদুরাজ। এভাবে জাদুরাজের সুনাম দিক দিকে ছড়িয়ে পড়ে। জিন বা ভূত যত দূরেই থাক না কেন, মন্ত্র পড়ে কাঠিতে ফু দিলেই কাঠি উড়ে গিয়ে ধরে নিয়ে আসে জাদুরাজের কাছে। জাদুরাজ সেই দুষ্ট ভূত আর বদ জিনকে ধরে ধরে কাক বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেয়। এতে করে জাদুরাজ অনেক টাকা পয়সাও উপার্জন করতে থাকে। রোগীও আসতে থাকে অনেক, সঙ্গে টাকাও যেন উড়ে আসতে থাকে। শেষে টাকার নেশায় ঘুরংফুরং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। টাকা চাই- আরো টাকা দরকার।

এরপর এক মিথ্যাবাদী এসে জাদুরাজকে বলে আমার এক বিঘা জমি চরের মধ্যে ছিল, জমিটা নিমাই নামে তার লোকজন গিয়ে দখল করেছে। সে কিছুতেই জমিটি আমাকে আর ফেরত দিচ্ছে না। আপনি যদি আমাকে জমিটি ফেরত পেতে সাহায্য করেন আমি আপনাকে এক লাখ টাকা দেব। টাকার লোভে জাদুরাজ রাজি হয়ে বলে ঠিক আছে কাল সকালে আসবে। আমি রাতের মধ্যে কিছু বাঁশ কেটে সেগুলো মন্ত্র পড়ে ফু দিয়ে রাখব। সকালে জাদুর কাঠির সঙ্গে আকাশে উড়িয়ে দেব। আর গিয়ে তোমার জমিতে গিয়ে যাদের পাবে তাদের সবাইকে আঘাত করে ধরাশায়ী করে দেবে। তাদের মধ্যে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে; বাকিরা ভয়ে জমি ছেড়ে পালিয়ে যাবে। আর কোনো দিন জমিতে আসার সাহস করবে না। আসলে নিমাই ক'দিন আগে জমিটি বিক্রি করে সেই টাকা সব জুয়া খেলে হারিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জমি ফিরে পেতে এই চক্রান্ত করে। জাদুরাজের কথা শুনে নিমাই বাড়ি চলে গিয়ে পরদিন সকালে আবার জাদুরাজের বাড়ি যায়। জাদুরাজ এক লাখ টাকা আগে হাতে নিয়ে- যা করার তাই করে। জাদুর কাঠি ও বাঁশের লাঠি একসঙ্গে উড়ে গিয়ে সেই জমিতে তুমুল কান্ড শুরু করলে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। এমন অবস্থা দেখে আর কেউ জমিতে আসে না। নিমাই জমি দখল করে নেয়।

এরপর থেকে জাদুরাজের কোনো জাদুই আর কাজে লাগে না। সে একেবারেই হতাশ হয়ে যায়। তখন মনে গুরুর দেওয়া পরামর্শ মনে পড়ে গিয়ে অনুতপ্ত হয় হায় হায় করতে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে