রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখছেন তো?

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ভালো স্বাস্থ্য মানে মানসিক আর শারীরিক দুই দিক থেকেই সুস্থ বা ঠিক থাকা। অনেকের বেলায় দেখা যায়, শরীর ঠিক থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ঠিকমতো চালিয়ে নিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে সব মানসিক সমস্যা দূরে ঠেলে মনকে ফুরফুরে করে তুলতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য সামগ্রিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে উলেস্নখযোগ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাদার সাফল্য পর্যন্ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের যে গভীর প্রভাব রয়েছে তা মানুষ চিনতে শুরু করেছে। তাই শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখাটাও এখন খুব জরুরি। এ রকম সহজ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্য কী?

মেন্টাল হেলথ কী- তা বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে স্বাস্থ্য কী। খুব সহজ করে বললে, স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। সুতরাং, আমরা বলতে পারি একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো রোগ বালাই মুক্ত শরীর এবং সেই সঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি থেকে মুক্ত মন এবং সমাজে বসবাস করতে গিয়ে কোনো সামাজিক বাধার সম্মুখীন না হওয়া।

মেন্টাল হেলথ জরুরি

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যত কুসংস্কার ও ভুল ধারণা:এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রধান বাধাগুলোর মধ্যে একটি হলো এটিকে ঘিরে থাকা অসংখ্য ভুল ধারণা। অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দুর্বলতা বা ব্যক্তিগত ব্যর্থতার লক্ষণ। যাইহোক, মানসিক স্বাস্থ্য চরিত্র বা শক্তির প্রতিফলন নয় বরং মানুষের সুস্থতার একটি দিক যার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই যত্ন ও মনোযোগ প্রয়োজন। যারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সহানুভূতি এবং সমর্থন বাড়ানোর জন্য এটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া বিভিন্ন কারণে অপরিহার্য। প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের আবেগ, চিন্তাভাবনা ও আচরণকে প্রভাবিত করে, আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও মিথস্ক্রিয়াকে আকার দেয়। একটি সুস্থ মন স্থিতিস্থাপকতা, আশাবাদ ও পরিপূর্ণতার বোধ জাগিয়ে তোলে। দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। চিকিৎসা না হলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অবশেষে, মানসিক স্বাস্থ্য সৃজনশীলতা এবং সাফল্যকে প্রভাবিত করে। যখন মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলিত হয়, তখন ব্যক্তিরা একাগ্রতা, সমস্যা সমাধান এবং সঠিক সিদ্ধান্তগ্রহণে ব্যর্থ হয়- যা তাদের সামগ্রিক কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন

কোনগুলো মানসিক সমস্যা জেনে নিন-

মানসিক সমস্যা হচ্ছে চিন্তা, আচরণ ও আবেগের পরিবর্তনের কারনে যদি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার গুনগত মান কমে যায়, ব্যক্তি ও সামাজিক সম্পর্ক ব্যাহত হয় এবং তার পেশাগত দক্ষতা হ্রাস পায় তাহলে তাকে মানসিক সমস্যা বলে।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ

হ শৈশব নির্যাতন

হ ট্রমা বা অবহেলা

হ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব

হ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, দরিদ্রতা বা ঋণ

হ বর্ণবাদসহ বৈষম্য এবং কলঙ্কের সম্মুখীন হওয়া

হ শোক (আপন কাছের কাউকে হারানো)

মানসিক রোগ

মানসিক অসুস্থতা- যা মানসিক ব্যাধি বা মানসিক রোগ হিসেবেও পরিচিত, এটি এমন এক মেডিকেল কন্ডিশন- যা কোনো ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, আবেগ, আচরণ এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। এই সমস্যা একজন ব্যক্তির কাজ করার এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করার ক্ষমতার ওপর উলেস্নখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক অসুস্থতা বৈচিত্র্যময়। বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো অপেক্ষাকৃত সাধারণ অবস্থা থেকে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো আরও গুরুতর ব্যাধি পর্যন্ত হতে পারে।

মনোসামাজিক সমস্যা

ব্যক্তির মানসিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থাকে একত্রে মনোসামাজিক অবস্থা বলা হয়। একজন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা নির্যাতনের ঘটনা তার মনোসামাজিক অবস্থার ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং তার ফলে একই সঙ্গে যে মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে তাকে মনোসামাজিক সমস্যা বলে। যেমন কোনো নারী বা শিশু যদি এসিড নিক্ষেপ বা ধর্ষণের শিকার হয় তখন সে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত পায়। আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেলে আমাদের সমাজে প্রায় সময় ভুক্তভোগীর ওপরই দোষ চাপানো হয়, এতে ভুক্তভোগী আত্মবিশ্বাস ও মনোবল হারিয়ে ফেলে।

প্রাথমিক মানসিক সহায়তা কী?

যে কোনো দুর্যোগ, সহিংসতা বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু কথার মাধ্যমে যে সহায়তা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক মানসিক সহায়তা বলে।

কাউন্সিলিং কী?

কাউন্সিলিং হলো বিশেষ ধরনের সাইকো থেরাপি বা মনোবিকলন পদ্ধতি। মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসায় এবং অনেক ধরনের মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা বা রোগ নিরাময়ের চেষ্টাকে কাউন্সিলিং বলে।

কোনটি কাউন্সিলিং নয়

হ ভুক্তভোগীকে শুধু উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া, হ শুধু সমবেদনা জানানো. হ ভুক্তভোগীকে তথ্য প্রদান করা, হ শুধু সিদ্ধান্ত দেওয়া, মন্তব্য করা বা সমালোচনা করা।

মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয় বরং একটি সামাজিক দায়িত্ব। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব স্বীকার করে, কুসংস্কার দূর করে এবং সুস্থতার প্রচার করে, আমরা সম্মিলিতভাবে এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে পারি যেখানে শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্য দেয়া হয় এবং সমর্থন করা হয়। আসুন আমরা এমন স্থিতিস্থাপক সম্প্রদায় গড়ে তোলার চেষ্টা করি- যা মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়, ব্যক্তি জীবন উন্নতি করতে এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে